বিল ইজারা নিতে প্রভাবশালীদের দৌড়ঝাঁপ, হুমকির মুখে ১২০০ জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় দুইশ বছরের পুরনো বিল  © টিবিএম ফটো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় দুইশ বছরের পুরনো বিলের ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দুই উপজেলার জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন। যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ সংঘর্ষ। বিলটি নাসিরনগর উপজেলার মৌজাধীন হলেও পাশের সরাইল উপজেলার একটি পক্ষকে ইজারা পাইয়ে দিতে দৌড়ঝাঁপ প্রভাবশালী মহলের।

জানা গেছে, ‘বিল শাপলা ফিসারী’ জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার তিতাস নদী সংলগ্ন গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। এর দক্ষিণ পাশে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। জলমহালটির আয়তন ৩৯৬ দশমিক ৬৫ একর। গত বছর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ইজারা মূল্য পরিশোধ করে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতি বিলটির ইজারা পায়। বর্তমানে এই সমিতিতে সরকার নিবন্ধিত ৫৩৮ জন জেলে আছে। অনিবন্ধিত জেলে আছে আরো ৭০০ জনের মতো। সবমিলিয়ে প্রায় ১২০০ জেলের পরিবার ১০ হাজারের মতো লোকসংখ্যা নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন। অপরদিকে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৪৯ জন। তাদেরও দাবি বিলে মাছ ধরেই তাদের জীবিকা চলে।

ইতোমধ্যে দুই উপজেলার জেলেদের ইজারার দাবির প্রেক্ষিতে নাসিরনগর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায় এটি নাসিরনগর উপজেলার মৌজাধীন এবং নাসিরনগরের জেলেরা শুরু থেকেই সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে সেখানে মাছ ধরছেন। 

নাসিরনগরের জেলেদের দাবি, প্রায় দুইশ বছর ধরে এ বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। বিল শাপলাকে কেন্দ্র করেই এখানকার জেলেদের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটেছে। বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার হার। বছরের এ সময়টায় জেলেরা বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ ধরার জাল, নৌকা তৈরি করে। বিলের ইজারা না পেলে হুমকির মুখে পরবে তাদের জীবন-জীবিকা। 

সরেজমিনে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম, ডিঘর ও সূচীউড়া জেলে পাড়ায় গিয়ে স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে তাদের গ্রামে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিটি গড়ে উঠে। সেই থেকে বাংলাদেশ সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে অদ্যবধি ইজারা নিয়ে বিলটিতে মাছ ধরে আসছেন তারা। সম্প্রতি সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রামের একটি মৎস্যজীবী সমিতি বিলটি ইজারা নিতে জেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাকে ধরে তদবির শুরু করেছেন বলে অভিযোগ জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির জেলেদের। 

জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, এই বিলের মাছ ধরে আমাদের এলাকার ১০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। গত ৭ মে জেলাপ্রশাসন আমাদের চিঠি দিয়ে শুনানির জন্য ডেকেছিল। কিন্তু তারা আমাদেরকে বলছে সরাইলের সাথে মিলে মিশে মাছ ধরতাম। আমরা এ বিলে প্রায় দুইশ বছর যাবত মাছ ধরে আসতাছি। এখন হঠাৎ কইরা বিল সরাইল উপজেলার কিছু প্রভাবশালী লোকরে ইজারা নিতে চাইতেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সরাইলের জেলেদের জলমাহলটি ইজারা পাইয়ে দেয়ার জন্য তদবির করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। 

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিল নাসিরনগরের। এটা সবাই জানে। আমি বলেছি সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। আমি কারো পক্ষে কথা বলিনি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরা ইজারা নিয়ে মাছ আহরণ করে আসছে। বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেটে এই তথ্যই মেলে।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, বিল শাপলা জলমহালটি নাসিরনগর উপজেলার মৌজায়। নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হলো নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। 

বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মন্তব্য নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক শাহাগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী যারা ইজারা পাওয়ার তারাই পাবে।


মন্তব্য