ফেনীতে ভুল অপারেশনে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল সিলগালা 

সারাদেশ
  © টিবিএম ফটো

ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত আল মদিনা হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১১, জুন) সকাল ১১ টার দিকে লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হাসপাতালটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। 

ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম মাসুদ রানা জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় আল মদিনা নামে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে পারি। ওই তথ্যের ভিত্তিতে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ স্বেচ্ছাপ্রনোদিত হয়ে আর একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়।

নিহত শিশুটির নাম ওসমান গণি (৫)। সে ফেনী সদর উপজেলার মধ্যম ফরহাদ নগর খাইরা আলাউদ্দিন হুজুর বাড়ির সাইফুল ইসলামের ছেলে।

রোগীর স্বজনরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ওসমান গণির হার্ণিয়া অপারেশনের জন্য ফেনী শহরের দাউদপুল ব্রিজ সংলগ্ন আরামবাগ এলাকার আল মদিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক যাবতীয় রিপোর্ট দেখে মোট ৩টি অপারেশন করতে হবে বলে জানায়। এতে অভিভাবকরা সম্মত হলে বিকাল ৩টার দিকে ওসমানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত থিয়েটার থেকে কোনো চিকিৎসক বাইরে না আসায় ও রোগীর বিষয়ে কিছু না জানানোয় স্বজনদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওসমানের জ্ঞান ফিরছে না বলে জানিয়ে তাকে দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।

বিষয়টি জানতে পেরে স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরকে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে স্বজনরা ওসমান মারা গেছে জানতে পারার পর অপারেশন থিয়েটারে থাকা কর্তব্যরতদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে ওসমানের মরদেহ ও চিকিৎসকদের অপারেশন থিয়েটারে রেখেই স্বজনরা তালা লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের লোকজন পালিয়ে যায়। 
ওসমানের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে কম টাকায় হার্নিয়া অপারেশনের জন্য এ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু ভুল অপারেশনে তার মৃত্যুর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা এর বিচার চাই। দোষীদের শাস্তি চাই। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।       

থিয়েটারে এ্যানেস্থেসিয়ার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। পরে তার জ্ঞান ফিরে না আসায় আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। এক পর্যায়ে দেখি সে বেঁচে নেই। সম্ভবত সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। থিয়েটারে সার্জারি চিকিৎসকের দায়িত্বে থাকা আদনান আহমেদ বলেন, নিয়ম মোতাবেক এ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আমি তার অপারেশন শেষ করি। রোগীর জ্ঞান ফিরে আসা না আসাটা মূলত এ্যানেস্থেসিয়ার ওপর নির্ভর করে। বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত হলে মূল সমস্যা বের হয়ে আসবে।

ফেনী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের সঙ্গে সমস্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেনীর সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ শিহাব উদ্দিন জানান ভুল অপারেশনে শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় এবং আইন লঙ্ঘন করে পরিচালনা করায় মেডিকেল প্র্যাক্টিস ও প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিস রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালটির সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।