সাদিয়ার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বাঁধা আর্থিক দৈন্যতা, স্বপ্ন পুরনে ইউএনওর সহযোগিতা
- ঈশ্বরদী(পাবনা) প্রতিনিধি:
- প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩৪ PM , আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩৪ PM

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা বাবুপাড়া এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া। বয়স যখন পাঁচ বছর তখনই হারিয়েছেন বাবাকে। তবে লেখাপড়ার প্রতি সাদিয়ার ছিল ভিন্ন রকম আগ্রহ। ২০১৭ সালে ৫ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকার গ্রীন জুয়েলস কিন্ডার গার্টেন থেকে অর্জন করেন জিপিএ ৫। সাদিয়ার মায়ের দুই মেয়ে নিয়ে জীবনযাপন করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় পরবর্তীতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর সাদিয়াকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি ফুফুর বাসায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করতে থাকে। এরপর ২০২০ সালে চিলড্রেনস হোম পাবলিক স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ অর্জন করেন। সবশেষে ২০২৩ সালে একই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। এরপরেই আসে বাধা-বিপত্তি। এতদিন কম খরচে পড়াশোনার খরচ চালানো গেলেও ভবিষ্যতের দিনগুলোতে পড়াশোনার খরচ বাড়তি হওয়াই তা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন সাদিয়া ও তার মা। 'সাদিয়ার স্বপ্ন পুরনে আর্থিক দৈন্যতা' এমন শিরোনামে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ হলে তা ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সুবীর কুমার দাশের নজরে আসেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সাদিয়া ও তার মার সাথে যোগাযোগ করে সাদিয়ার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পুরনে তার পড়াশোনার সব খরচের দায়িত্ব ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
সাদিয়ার পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য তার কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নেন তিনি। সোমবার(৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইউএনও তার নিজ অফিসে সাদিয়ার কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য নগদ অর্থ তুলে দেন এবং সাদিয়ার মায়ের জন্য একটি বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করেন। পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে সবসময় সাদিয়ার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন মানবিক এ ইউএনও।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পুরনে মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর ব্যাপারে ইউএনও সুবীর কুমার দাশ বলেন, সাদিয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। যার স্বপ্ন একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা তার সেই স্বপ্ন টাকার অভাবে পূরন হবেনা তা কখনও মেনে নেওয়া যাইনা। সাদিয়ার বাবা নেই। তার মা অনেক কষ্ট করে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছে। অর্থাভাবে সাদিয়ার পড়াশোনা প্রায় অনিশ্চয়তার মুখে ছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে সংবাদ দেখে আমি সাদিয়ার পরিবারের সন্ধান নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি সাদিয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই তার পড়াশোনার প্রতি ছিল ভিন্ন ধরনের আগ্রহ। তবে বর্তমানে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতার কারণে বন্ধের পথে পড়াশোনা। সাদিয়ার লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয়ে যায়, তার বাবার স্বপ্ন যেন সে পূরণ করতে পারে, তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হয় একারণে আমি তাদের পাশে সব সময় থাকব। আমি যদি এখান থেকে বদলি হয়ে অন্য কোথাও চলেও যাই, তবুও সব সময় পাশে থাকব। তাদের বড় ছেলে হয়ে পাশে থাকব। এছাড়া জেলা প্রশাসক বরাবর জানিয়েছি, তারা যেন সাদিয়ার বিষয়টি দেখেন।
একজন ইউএনওর এমন সহযোগিতায় সাদিয়ার মা আবেগ-আপ্লুত হয়ে বলেন, ইউএনও স্যার যে এত অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন আমরা কল্পনাও করতে পারি নাই। সে ছেলের মতো পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন। আজ আমি এত খুশি যা বলে বোঝাতে পারব না। এখন আমার মেয়ের ডাক্তার হওয়ার পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, নিজের মেধা বিকাশ আর স্বপ্ন পূরনে একজন মানবিক ইউএনও কে পাশে পাবো তা কখনও ভাবতে পারিনি। আজ মনে হচ্ছে নতুন করে পথচলা শুরু হচ্ছে। ঈশ্বরদীতে একজন মানবিক ইউএনও আছে। আমার বাবার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারব এটা ভেবে অনেক ভালো লাগছে আমার। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।