মূলধনের অভাবে বিপাকে দুমকী'র রশি শিল্প কারিগরেরা

সারাদেশ
  © টিবিএম ফটো

পটুয়াখালীর দুমকি'র লেবুখালি ইউনিয়নে পরিত্যক্ত সিএন্ডবি রাস্তার দু'ধারে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী রশি শিল্পের কারিগরেরা বসবাস করেন। আধুনিকতার ছোঁয়া, মূলধন ও শ্রমিক সংকট এবং পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বাস্তহারাসহ নানা কারনে বিপাকে আছেন এ শিল্পের কারিগরেরা। 

একসময় শতাধিক পরিবার রশি তৈরির কাজে জড়িত ছিল। কালের আবর্তে বর্তমানে কিছু কিছু কারিগররা প্রতিযোগিতা মূলক এ পেশায় টিকে থাকতে না পেরে অন্যত্র চলে গেছে। আবার কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আগের দিনের মত জমজমাট নেই রশি তৈরির এ কর্মজজ্ঞে। 

মঙ্গলবার(৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে রশি শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে মাত্র ১১টি পরিবার। আর চটের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে মাত্র ৭টি পরিবার। 

রশি প্রস্তুতকারী সেলিম খন্দকার, শাহ আলম হাওলাদার, গোবিন্দ দাস, সুধীর মালাকার, বেবি আক্তার ও প্রতিবন্ধী রামদাসসহ এগারটি পরিবার এখনো তাদের এ পুরাতন পেশায় রয়েছেন। 

উপজেলার সবচেয়ে বয়স্ক রশি কারিগর জয়নাল গাজী বলেন, পায়রা নদীর ভাঙ্গনে বসত ভিটা হারিয়ে বর্তমানে সরকারি পরিত্যক্ত সিএন্ডবি রাস্তার পাশে এসে ঠাঁই নিয়েছি। 

অপর এক কারিগর সেলিম খন্দকার বলেন, এখন আর এ পেশায় আগের মত ব্যবসা নাই। রশি তৈরীর কাঁচামাল ক্রয়, মূলধনের অভাব, শ্রমিক সংকট ও আধুনিক মেশিনের কারণে প্রতিযোগিতার স্রোতে টিকতে পারছি না। 

শাহ আলম হাওলাদার জানান, পূর্বে চট্টগ্রাম থেকে রশি তৈরির জন্য পুরান চট ও শাইন জাল কম মূল্যে  আনা হতো। বর্তমানে ঢাকা থেকে চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। এতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপাকে আছি। 

গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, প্রতি কেজি পুরানো চট বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় এবং পুরান সাইন জাল ১৫ থেকে ২০টাকায় ক্রয়  করা হয়। যাতায়াত খরচ, শ্রমিক ও প্রস্তুত খরচ বাবদ আরো খরচ হয় ১০ টাকা। প্রতি কেজি রশি বর্তমানে গড়ে পাইকারি বিক্রি করা হয় কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। 

প্রতিবন্ধী রাম দাস আমাদের নতুন সময়কে বলেন, ৫০ বছর যাবত এ পেশায় আছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তা পেলে আমরা আবার এ পেশাকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হব। 

কালের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত স্হানীয় লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী লেবুখালী পুরান বাজার এলাকার রশি শিল্প একসময় দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমাদর ছিল। বর্তমানে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে হারাতে বসেছে এ শিল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর আর্থিক সহায়তা পেলে সম্ভাবনাময় শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারে। 


মন্তব্য