সাজেকের দুর্গম পাহাড়ে যাচ্ছে সুপেয় পানি

সাজেক
  © সংগৃৃহীত

রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি যেন এক অপূর্ব প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। প্রতিনিয়ত সেখানে বাড়ছে পর্যটক আকর্ষণ। এক সময় বিদ্যুৎ ছিল না। অন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল বাধা-বিপত্তিময়। সুপেয় পানির সংকটও সেখানে প্রকট। পর্যটক বাড়ায় সে সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দূষিত পানিপানে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের জন্য প্রায়ই শিরোনাম হয় সাজেক। সেই সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দুর্গম সাজেকের পাহাড়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে যাবে সুপেয় পানি।

প্রথমবারের মতো প্রকল্পের আওতায় কংলাক পাহাড় ও সাজেক ভ্যালিতে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। সাজেক পাহাড়ের নিচে পাম্প হাউজ নির্মাণ করে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। এজন্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। সাজেক পর্যটন এলাকাসহ রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাথুরে এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ডিপিএইচই।

প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৪৮ কোটি ৩১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। চলতি সময় থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন। এর মাধ্যমে সাজেক পর্যটন এলাকাসহ রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

প্রকল্পের আওতায় ছয়টি পরীক্ষামূলক নলকূপ, তিনটি উৎপাদক নলকূপ, তিনটি পাম্প, ট্রান্সফরমার, রিটেইনিং ওয়াল ও নিরাপত্তা দেওয়ালসহ পাম্প হাউজ নির্মাণ করা হবে। থাকবে পানি শোধনাগার। ১২ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন, ছয় কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ পাইপলাইন, ৩৫০টি গৃহসংযোগ, তিন কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, তিন কিলোমিটার জিএফএস নির্মাণ, ২০টি জিএফএস মেরামত ও সংস্কার এবং ১০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।


পর্যটকদের খাওয়ার পানির জন্য সম্পূর্ণভাবে বোতলজাত পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। স্থানীয় জনগণ পাহাড়ি ঝিরি থেকে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করে পানীয়জলের চাহিদা মেটায়। ছড়ার পানি ও স্থানীয় জনগণ গর্ত থেকে যে খাওয়ার পানির চাহিদা মেটায় দুটি উৎসই অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ। এই পানি ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এই পানি ব্যবহারের ফলে প্রায়ই স্থানীয় জনগণসহ পর্যটকরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন।

ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকা এবং সাজেকে অধিকাংশ এলাকা পাথুরে হওয়ায় নলকূপ স্থাপন সফল হয় না। সাজেকে পানি সরবরাহের জন্য ভূ-উপরিস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ দুটি উৎস থেকেই পানির প্রাপ্তি খুবই অপ্রতুল। পাথুরে কঠিন শিলা স্তর হওয়ায় নলকূপ স্থাপন খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।

প্রকল্প প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মাহমুদ কবীর বলেন, সাজেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক যান। এখানে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা দিলে পর্যটনখাত আরও বিকশিত হবে। সার্ভিস ভালো হবে। সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জন্য এটা ভালো উদ্যোগ।


মন্তব্য