বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৭ PM , আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৭ PM

গত শনিবার স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এটা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে যান চলাচল ঘিরে মহানগরের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে চলছে উৎসবের আমেজ। টানেল দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা গাড়ি নিয়ে ছুটে আসছেন। প্রথমবার টানেলের ভেতর দিয়ে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত তারা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে টানেলের ওই দুই প্রান্তে চালু হয়েছে লোকাল বাস সার্ভিস। আনোয়ারা প্রান্তের টানেলের সংযোগ সড়ক থেকে পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা।
এছাড়া ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দূরপাল্লার বাসগুলোও চলাচল করতে শুরু করেছে টানেল হয়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, টানেল সংযোগ সড়কে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। প্রাইভেটকার, হাইস, নোহা, পিকআপ ও বাসে করে পরিবার, পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে আসছেন টানেল দেখতে। ঘুরে ঘুরে পর্যটকরা টানেলের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দেখছেন। কেউ কেউ টানেলে টোল আদায়ের পর সংযোগ সড়কে গাড়ি থামিয়ে তুলছেন ছবি, কেউ করছেন ভিডিও।
দর্শনার্থী তাজমিরা আকতার বলেন, আজকের দিনটা আমার পরিবারের জন্য অনেক আনন্দের। সত্যি বলতে জীবনের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে আসতে পেরে অনেক খুশি লাগছে। একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন আবদুল কালাম আজাদ নামের আরেক পর্যটকও।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের খননকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় সাড়ে চার বছর পর গত শনিবার টানেলের উদ্বোধন করা হয়। এর পরদিন (রবিবার) গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিল চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল-টিউব নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
দুই টিউব, চার লেন : তথ্য মতে, টানেলে রয়েছে দুটি টিউব। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারাপ্রান্তে।
নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হয়েছে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
টোল হার : টানেল দিয়ে চলাচলকারী গাড়ির টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। টোলের হার- কার, জিপ, পিকআপ ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, বাস (৩১ সিট পর্যন্ত) ৩০০ টাকা, ৩১ সিটের বেশি ৪০০ টাকা, বাস থ্রি এক্সেল ৫০০ টাকা, ট্রাক ৫ টন পর্যন্ত ৪০০ টাকা, ট্রাক ৫ থেকে ৮ টন পর্যন্ত ৫০০ টাকা, ৮ টন থেকে ১১ টন পর্যন্ত ৬০০ টাকা, ট্রাক থ্রি এক্সেল ৮০০ টাকা, টেইলার ফোর এক্সেল এক হাজার টাকা, ফোর এক্সেল থেকে বেশি এক হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি স্কেল ২০০ টাকা হারে যোগ হবে।