জমে উঠেছে কালাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

মাছ
  © ফাইল ছবি

মূলত জামাই মেলা,তবে সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা।নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পাঁচশিরা বাজারে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মাছের মেলা।শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই মেলায় চললো মাছ কেনা ও বিক্রির উৎসব। দিনের শুরুতেই জমতে শুরু করেছে মেলাটি।

বলছিলাম জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলার কথা। এই দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যপী চলে আনন্দ-উৎসব।দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী।

পৌর এলাকা এবং আশপাশে যাদের শ্বশুর বাড়ি, সেসমস্ত জামাইরা হচ্ছেন এই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী।তাছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক ধরনের নীরব প্রতিযোগীতা।আর এই প্রতিযোগীতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে তার শশুরবাড়ীতে নিয়ে যেতে পারে। 

শনিবার(১৮ নভেম্বর) মেলায় গিয়ে দেখা গেল, একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। মাছের নাম কাতলা।বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৩০ হাজার টাকা। জামাই ক্রেতাদের মধ্যে একজন মাছটির দাম সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা বলেছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য।

উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই।বাইরের উপজেলা থেকেও অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই এসেছেন পাঁচশিরা বাজারে।এবারের মেলায় প্রায় ত্রিশের মতো মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

মেলায় সামুদ্রিক চিতল,ইলিশ,আইড়,বোয়াল,কালী বাউশ,পাবদা,গলদা চিংড়ি,গুলশা,আইকর, বড় রুই,কাতলা,বড় সিলভার,ব্রিগেট,মৃগেলসহ নানা রকমের দেশি মাছ স্থান পেয়েছে।

মাছের মেলার আয়োজকরা জানান,এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এখন সময়ের বিবর্তনে প্রতিবছর নবান্ন উৎসবে অগ্রহায়ণ মাসের ০৩ তারিখে এ মেলার আয়োজন করা হয়।প্রায় ৪০ বছর ধরে মেলাটির আয়োজন এভাবে হয়ে আসছে।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

এলাকার জামাইরা বলেন,শশুরবাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা!তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর মেলার বড় মাছটার দিকেই থাকে।

স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ ও জাইদুল ইসলাম জানান,সপ্তাহখানেক ধরে তারা বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন।সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।কারণ বড় মাছ সংগ্রহ করা অনেক কষ্ট।সহজে পাওয়াও যায় না।    

মেলা নিয়ে কথা হয় বেগুনগ্রামের জামাই রাজিউল ইসলামের সঙ্গে।তিনি জানান,এবার সাড়ে ৩৫ হাজার টাকার কাতলা,চিতল,বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন শশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

মাছের মেলার বিষয়ে পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানা জানান,মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক।মেলায় বেচাকেনা যতই হোক না কেনো,এ মেলা আমাদের ঐতিহ্যকে বহন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।


মন্তব্য