চা শ্রমিক 'স্বামী' হারা কুন্তী হাজরার যেসব কথা অনেকেরই অজানা

মৌলভীবাজার
  © সংগৃহীত

চারপাশটা সবুজে ঘেরা, কাঁচা রাস্তা ভাগ করেছে দুই পাশের বিস্তীর্ণ অংশকে। কোথাও আবার উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা টিলা। এখানে সবুজের সমারোহ দেখতে প্রতি বছরই অনেক ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে আসেন। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না, পরতে পরতে সবুজ মাখানো এই বাগানের শ্রমিকদের নিদারুণ কষ্টের কথা। আধুনিক যুগে এসেও যারা মধ্যযুগীয় কায়দায় শোষণের শিকার। শ্রমিকের কান্না আর আহাজারি হয়তো ওপরের দরজায় পৌঁছায় না।

কুন্তী হাজরা স্বামী  হারানোর পর  চার মেয়ে কে লেখা পড়া করাতে হচ্ছে, স্বামী কে   হারিয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাখাই ছড়া চা বাগানের শ্রমিক কুন্তী হাজার । ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার।  ১৯ বছর বয়সে তিনি চা- বাগানে কাজ শুরু করেন। প্রায় ৩ বছর ধরে ফিনলে কোম্পানির এই বাগানে কাজ করছেন তিনি।

স্বামী- হারা সন্তানসহ পাঁচ জনের পরিবার।  সংসারে অভাব ভুগতে হচ্ছে এই চা শ্রমিক কুন্তী হাজরাকে , এবং মেয়েদের কে লালন পালন লেখা পড়াতে হিমশিম খাচ্ছে । এবং বড় মেয়ে পড়ছেন ক্লাস তৃতীয় শ্রেণীতে , আরো দুই মেয়ে পড়ছেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে ছোট মেয়ে শিশু উয়ানে।  

>> চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ। কিন্তু কেজুয়েল দের কে দেওয়া হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা । কুন্তী হাজরা চা শ্রমিক হয়েও নেই বাগানে পার্মেটলি কাজ । করতে হচ্ছে কেজুয়েলে কাজ দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ১২০ টাকা। ১২০ টাকায় জীবন ভিন্ন।

প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে চার মেয়ে জন্য   পাতা শুকিয়ে বানানো লবণ চা, রেশন হিসেবে পাওয়া আটা দিয়ে বানানো রুটি আর চা-পাতার ভর্তা বানিয়ে রাখেন কুন্তী হাজরা । ৮টার দিকে পুঁটলিতে চা, রুটি আর চা-পাতা ভর্তা বা চাল ভাজা নিয়ে চলে যান বাগানের গহীনে। মজুরির ১২০ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাই নেই  কোন ওভারটাইম । দুপুরে ঘরে খাওয়া হয় খুব কম। সঙ্গে নেওয়া খাবারের পুঁটলিটাই ভরসা। আর বড় মেয়ে দায়িত্ব ছোটদের দেখভাল করা। কখনো আবার বাচ্চাদের সঙ্গে করেই নিয়ে যান।

তিনি জানান, তার বাগানে নির্ধারণ করে দেওয়া আছে ২৪ কেজি চা-পাতা তুলতে হবে বেশি পাতা তুললে আগে পেতাম হাজার বারো শো মতো টাকা। কিন্তু এখন তো চা পাতা নেই তাই এখন সাপ্তায় ৭২০ টাকা পাছি । অসুস্থ হয়ে পড়লে কোন টাকা পান না।বিনিময়ে যে মজুরি পান, তাতে কিছুই হয় না। ধারদেনা করে চলতে হয়।

এ কারণে মেয়ে দের কে লেখা পড়া করাতে হিমশিম কাছে।  কাজ শেষ বিকেলে ঘরে ফেরেন। এরপর রাতের খাবারের বন্দোবস্তের পালা। আটা আর সেদ্ধ আলু ও চা-পাতা দিয়ে বানানো ভর্তাই ভরসা। মেয়ে দের জন্য হলেও মাঝে মাঝে চাল কিনতেই হয়। যেদিন চাল কেনেন, সেদিন তিন ভাগ রাঁধেন আর এক ভাগ কলসিতে সঞ্চয় করেন। হঠাৎ কোনো আত্মীয়স্বজন এলে এই কলসিতে হাত পড়ে।থাকছে ছোট একটি ঘরে।