ঈশ্বরদীতে ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্বার মৃত্যু, স্বজনদের মানববন্ধনে হামলা

পাবনা
  © সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীতে ভুল চিকিৎসায় অন্তরা খাতুন(২৩) নামের এক অন্তঃসত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগে চিকিৎসকের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার(১০ জানুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার আলো জেনারেল হাসপাতালের মূল ফটক ঘেরাও করে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে বার বার ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুসহ নানা ক্ষতিসাধনের বিচার ও চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধের দাবী জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার(৪ জানুয়ারি) সন্ধা সাড়ে ৭ টার দিকে পৌর শহরের আমবাগান এলাকার ফজলে রাব্বীর স্ত্রী অন্তরা খাতুনকে প্রসববেদনা নিয়ে আলো জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাৎক্ষণিক তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে ঠিক মত অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশন পরিচালনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ও হাসপাতালে স্বত্বাধিকারী ডাঃ শফিকুল ইসলাম শামীম ও তার স্ত্রী ডা. মাসুমা আঞ্জুমা ডানা। এতে ভুলক্রমে প্রসূতি ঐ নারীর জরায়ুর নাড়ী কেটে ফেল্লে অবস্থা আশংকাজনক হয়ে পড়লে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। পরিবারের লোকজন রাজশাহী নেওয়ার পথে অন্তরা খাতুনের মৃত্যু হয়। তার দুদিন পরই একই হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে সাঁড়া ঝাউদিয়া গ্রামের মোঃ সোহেলের স্ত্রী জিমা খাতুন নামে আরেক প্রসূতি নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 

বার বার ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু আলো জেনারেল হাসপাতালে নতুন কিছু নয় বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। তারা জানিয়েছেন রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ আচরন থেকে শুরু করে চিকিৎসা গাফিলতি ও নানা অনিয়মে বতর্কিত ডাঃ শফিকুল ইসলাম শামীম। বিগত সময়েও একাধিক চিকিৎসা গাফিলতির কারনে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। 

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর কয়েকজন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ভুল অপারেশনে যেন আর কেউ মারা না যায় এজন্য আমরা চিকিৎসকের শাস্তি ও হাসপাতাল বন্ধের দাবী নিয়ে মানববন্ধন করছি।

নিহত ঐ প্রসুতি নারীর স্বামী ফজলে রাব্বী ও শ্বাশুড়ি জান্নাতুল ফেরদৌস রুনু বলেন, অন্তরা খাতুনকে প্রসববেদনা নিয়ে ভর্তি করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের ওষুধ কিনতে বাহিরে যেতে বলেন। আমরা এসে দেখি রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেওয়া হয়েছে। আমাদের ওষুধ না নিয়েই তাদের ওষুধ দিয়েই রোগীকে অপারেশন করা হয়। ঠিক মতো অ্যানেস্থেসিয়া করা হয়নি। অপারেশনেরে পরপরই রোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে দুইবার চিৎকার দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তারা হুড়ো করে অপারেশন করে যখন দেখে রোগীর অবস্থা খারাপ তখন তাকে অন্যত নেয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা রাজশাহীতে নেওয়ার পথেই রোগী মারা যায়। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। যাতে আর কেউ এভাবে মৃত্যুবরণ না করেন।

ঘটনার সত্যতা জানতে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম শামীম ও তার স্ত্রী ডা. মাসুমা আঞ্জুমা ডানার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে হামলা ব্যাপারে হাসপাতালে কর্মচারীরা বলেন, কোন হামলা করা হয়নি। হাসপাতালের সুনাম নষ্ট করতে মুলত মিথ্যা অভিযোগ টেনে আনছেন তারা।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী বলেন, থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তারা। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাবনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. শহিদুল্লাহ দেওয়ান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই আমরা হাসপাতালটি সমায়িক বন্ধ করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।