নিহত বিজিবি সদস্যের মরদেহ দুদিন পর ফেরত দিলো বিএসএফ

সারাদেশ
  © সংগৃহীত

যশোরের বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দুই দিন পর এ মরদেহ ফেরত দেয় বিএসএফ।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় পতাকা বৈঠকের পর শার্শার শিকারপুর সীমান্তের মুক্তিযোদ্ধা খামার পাড়া ও ভারতের গাঙ্গুলিয়া সীমান্তের ২৮ নং মেইন পিলার দিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে রইশুদ্দীনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে তার মরদেহ যশোর সদর হাসপাতালের মর্গে আছে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

বিজিবির সৈনিকের মরদেহ হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর ৪৯ বিজিবির সিও জামিল আহম্মেদ ও ভারতীয় বিএসএফের ১০৭ ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তরা। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্তসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

এর আগে সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তের বিওপির জেলেপাড়া পোস্টসংলগ্ন এলাকায় বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হন রইশুদ্দীন।

বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সিপাহী মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

রইশুদ্দীন হত্যাসহ গত ৩ বছরে শুধুমাত্র বেনাপোল-শার্শা সীমান্তে ৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। এছাড়া সীমান্ত থেকে অজ্ঞাত অনেক মরদেহ উদ্ধার হলেও তদন্তে দুর্বলতার জন্য কোনটিরই জট খোলেনি।

বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনায় বেনাপোলের ঘিবা গ্রামের আব্দুল বারি জানান, তিনি রাতে পর পর ৭ রাউন্ড গুলির শব্দ পান। পরে ভোরে লোক মুখে শুনতে পান এক বিজিবি সদস্যকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এটি দুঃখজনক ঘটনা।

এর আগে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল আহম্মেদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্টসংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে গরু চোরাকারবারিদের সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখলে দায়িত্বরত বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। এরপর তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সৈনিক মোহাম্মদ রইশুদ্দীন মারা গেছেন।

এ বিষয়ে জেলা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের গভীর সুসম্পর্ক রয়েছে। সীমান্তে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা নিন্দাজনক। আমরা আশা করছি, দুই সরকারই বসে এটা নিরসন করবে। এটা নিয়ে দুদেশের মধ্যে কোনো বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। এটা নিয়ে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি হোক সেটাও আমরা আশা করি না।’

এদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক ছাড়াও দুদেশের উচ্চ পর্যায়ের সীমান্ত বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনোটাই রক্ষা করে না প্রতিবেশী তথা বিএসএফ। এতে একের পর এক ঘটছে হত্যার ঘটনা।