ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় পুলিশ সদস্য নিহত

সড়ক দুর্ঘটনা
  © সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনা দেশে মহামারি আকার ধারণ করছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের খবর পাওয়া যায়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার গুল্লাহ এলাকায় ট্রাক চাপায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহত ওই পুলিশ সদস্যের নাম ইউনুস আলী। তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ছয়আনী বাজার এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে। ইউনুস আলী ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানা, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ঢাকায় ফিরছিলেন ইউনুস। এ সময় একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই ইউনুস আলীর মৃত্যু হয় ।

গোড়াই থানার এসআই আনিসুজ্জামান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। মরদেহ মর্গে পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ২৬১টি। এতে প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজার ৯০২ জন এবং আহত হয়েছে ১০ হাজার ৩৭২ জন। একই সময়ে রেলপথের ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে মোট ১৪৮টি। এসব ঘটনায় ৯১ জন নিহত ও ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৬ হাজার ৯২৯টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত ও ১০ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছে। সড়কে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, ২ হাজার ৩১টি। এসব দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৫২ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছে; মোট দুর্ঘটনার যা ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নিহতের ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ও আহতের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ।  

বিগত নয় বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব যানবাহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫০ জন চালক, ৯৬৮ পথচারী, ৪৮৫ পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ শিক্ষার্থী, ৯৭ শিক্ষক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫৪ সদস্য, ৯৮৫ নারী, ৬১২ শিশু, ৩০ সাংবাদিক, ৩২ চিকিৎসক, ১৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা, আট আইনজীবী, ১০ প্রকৌশলী ও ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭৩ সদস্য। তাদের ১৬ সেনাসদস্য, ৪০ পুলিশ সদস্য, এক র‍্যাব সদস্য, সাত বিজিবি সদস্য, তিন নৌবাহিনীর সদস্য, তিন আনসার সদস্য, দুই ফায়ার সার্ভিস সদস্য ও একজন এনএসআই সদস্য। এছাড়া ১৩ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ সাংবাদিক, ৬৪৭ নারী, ৪৬৬ শিশু, ৪১৬ শিক্ষার্থী, ৮১ শিক্ষক, ১ হাজার ৫২৬ চালক, ২৬০ পরিবহন শ্রমিক, আট প্রকৌশলী, ৩৭ আইনজীবী, ৭৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২২ চিকিৎসকও রয়েছেন নিহতদের মধ্যে।

সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা, ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, দশমিক ২৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং দশমিক ৬৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে হয়েছে। এ সময়ে মোট ৮ হাজার ৫৫০টি যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে; যার ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বাস, ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি, ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এবং ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা ও লেগুনা।

সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ১১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও দশমিক ৬৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭১২ জন নিহত ও ২ হাজার ৩৮১ জন আহত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ২০৫ ও আহত হয়েছে ২ হাজার ২৯৪ জন। খুলনা বিভাগে ৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত ও ১ হাজার ৭৮ জন আহত হয়েছে।

বরিশাল বিভাগে ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত ও ৯৯২ জন আহত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন আহত ও ৬৬৫ জন আহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত ও ৯২৬ জন আহত হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৫৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ জন নিহত ও ১১৬৮ জন আহত হয়েছে।

২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। ওইদিনে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে। ২৬ মার্চ সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিন নয়টি সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ৭ জুলাই। এদিন ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ৪ মার্চ। এদিন ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ১৪৮ জন আহত হয়েছে।