খুলনার পথে পথে ঘুরছেন ডেনমার্কের নারী

সারাদেশ
  © সংগৃহীত

ডেনমার্কের নারী আশা ওয়েলিস মা-বাবার সন্ধানে খুলনার পথে পথে ঘুরছেন। গত ৩ দিন খোঁজ-খবর নিয়েছেন কয়েকটি মন্দির, গির্জা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু এখনও পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাননি। প্রায় ৫০ বছর আগে আশাকে বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে নিয়ে গিয়েছিল একটি খ্রিস্টান পরিবার। এরপর সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। 

আশা ওয়েলিস ১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি বাংলায় কথা বলতে পারেন না। তিনি জানান, ১৯৭৪ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার ২৬, ইসলামপুর রোডের মিশনারিস অব চ্যারিটি থেকে ডেনমার্কের একটি পরিবার আমাকে ডেনমার্কে নিয়ে যায়। সেখানেই আমি বড় হয়েছি। আমার স্বামী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের নিয়ে আমি সুখে থাকলেও জন্মস্থানের কথা ভুলতে পারিনি। আমি জানি না কে আমার মা, কে আমার বাবা। বাংলাদেশে কোনো আত্মীয়-স্বজন বেঁচে আছে কিনা তাও জানি না। আমি আমার শেকড়ের সন্ধানে এসেছি। 

তিনি বলেন, আমি আমার স্বামী মগেনস ফল্ককে সঙ্গে নিয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশে আসি। প্রথমে ঢাকায় মিশনারিস অব চ্যারিটিতে যাই। সেখানে কর্মরতরা পুরানো কাগজপত্র দেখে জানান যে, ডলি মণ্ডল নামে এক নারী আমাকে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার নির্মল হৃদয় শিশু সদনে নিয়ে রেখে এসেছিল। ওই সদন থেকে আমাকে পরে ঢাকার মিশনারিস অব চ্যারিটিতে পাঠানো হয়। ঢাকায় পাঠানোর কিছুদিন পর আমাকে ডেনমার্কে নিয়ে গিয়েছিল।

তিনি জানান, আমি বৃহস্পতিবার খুলনায় এসে প্রথমে নির্মল হৃদয় শিশু সদনে গিয়ে ডলি মণ্ডলের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিই। তারা সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে খোঁজার পরামর্শ দেয়। এরপর বাগমারা গোবিন্দ মন্দির ও শীতলাবাড়ি মন্দিরে গিয়ে খবর নেই। কিন্তু কেউ তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

আশা ওয়েলিস শনিবার বিকেল ৪টায় ডলি মণ্ডলের খোঁজে গিয়েছিলেন গণনবাবু রোডের যোসেফপাড়ায়। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্বামী মগেনস ফল্ক, দোভাষী গাইড মোস্তফা চৌধুরী। এছাড়া তাদেরকে সহযোগিতা করতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাসুদ আলম গোলদার। সেখানে দাড়িয়ে কথা হয় আশা ওয়েলিসের সঙ্গে। 

তিনি জানান, এখান থেকেও তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। এখানকার এক নারী বাবু খান রোডে সেন্ট যোসেফস ক্যাথিড্রালে গিয়ে খবর নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানকার ফাদার ও সিস্টাররা তাকে খালিশপুর নেভি গেটে খ্রিস্টান কলোনিতে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে খোঁজ নিয়েও কোনো তথ্য মেলেনি। পরে নগরীর সিমেট্রি রোডে খ্রিস্টানদের কবরস্থান ‘সাহেবের কবরখানায়’ যান তারা। সেখানকার কেয়ারটেকার পিটার তাদেরকে ডলি মণ্ডল নামের একজনের কবর দেখান। তবে ডলি মণ্ডলের বিস্তারিত পরিচয় তিনি জানাতে পারেননি।

আশা’র সঙ্গে থাকা গাইড মোস্তফা চৌধুরী জানান, পিটার নথিপত্র দেখে এবং খোঁজ-খবর নিয়ে দুই থেকে এক দিনের মধ্যে ডলি মণ্ডলের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের দিকে বাংলাদেশের কিছু পরিবার অভাব-অনটনে পড়ে একাধিক সন্তান থাকলে এক থেকে দুটি সন্তানকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিতেন। ডলি মণ্ডল নামের ওই নারী হয়তো তার মেয়ে আশাকে অভাবের তাড়নায় অনাথ আশ্রমে দিয়েছিল-আমি এ রকম ধারণা করছি। তবে আমার এই ধারণা সঠিক নাও হতে পারে। আমরা আশা’র শেকড়ের সন্ধান করছি।

মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমরা যেসব জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়েছি, সেখানকার লোকজনের কাছে মোবাইল নম্বর দিয়ে এসেছি। যদি তারা কোনো তথ্য পায় তাহলে আমাদেরকে জানাবে। রোববার (১৭ মার্চ) সকালে আমরা বাগেরহাট যাবো। ১৮ মার্চ মোংলা হয়ে সুন্দরবনে যাবো। ২০ মার্চ বরিশাল, এরপর ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম যাবো। আশা ও তার স্বামী আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে।    

নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাসুদ আলম গোলদার জানান, ডেনমার্ক প্রবাসী আমার এক সাবেক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে আশার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর তার মা-বাবাকে খুঁজতে আমি তাকে সহযোগিতা করছি। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। মা-বাবাকে খুঁজে পেলে আশা অনেক খুশি হবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ