‘ঈদ যাত্রায় ৯৮৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে যাত্রীদের’

ঈদ
  © ফাইল ফটো

আসন্ন ঈদ যাত্রায় ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। ঈদ যাত্রায় ঢাকা ছাড়তে এসব যাত্রীদের মোট ৯৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া হিসেবে গচ্ছা দিতে হবে।

আজ রবিবার (৭ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢাকা থেকে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে ঈদযাত্রা পরিস্থিতি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী সেবার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে।

সমিতি বলছে, ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌ-পথে পরিবহন হবে। ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে প্রায় ৬০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যাত্রী প্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে এসব যাত্রীদের কাছ থেকে ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।

রাজধানীতে চলাচলকারী অটোরিকশায় ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য মেতে উঠেছে। ঈদে কেনাকাটা, বিভিন্ন টার্মিনালে যাতায়াতের পাশাপাশি দৈনন্দিন নানা কাজে এসব অটোরিকশা ব্যবহার করতে গিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে গড়ে প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ঈদের আগে রাজধানীতে চলাচলকারী ২৫ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশায় প্রায় ৭০ লাখ ট্রিপ যাত্রীকে ১৪০ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। ইজিবাইক, রিকশা, মোটর রিকশা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রী প্রতি গড়ে ২০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ১০ লাখ ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্যাডেল চালিত রিকশায় ১৪ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এই যানবাহনে যাত্রীদের ২৮০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
লেগুনা, দুরন্ত, দিগন্ত নানা নামে পরিচিত রাজধানীতে চলাচলকারী ৭ হাজার হিউম্যান হলারে ঈদের আগে প্রায় ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রীকে ঈদ বকশিসের নামে গড়ে প্রায় ২০ টাকা ভাড়া বাড়তি দিতে হবে। সেই হিসেবে ঢাকার লেগুনায় কেবল ১৬ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া আদায় হবে। 

ঈদে লম্বা ছুটির কারণে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত পরিবহন প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের প্রায় ৩০ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হচ্ছে।

এসব যানবাহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিজেদের পরিবহন ব্যবহার করলেও ১৫ লাখ যাত্রী ভাড়া চালিত যানবাহনে ঈদে বাড়ি যেতে ট্রিপ প্রতি গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসেবে এই পরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের ১১২ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটে ৩০ লাখ যাত্রীর যাতায়াতে যাত্রী প্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসেবে বাসের যাত্রীদের ৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে। 

প্রতিবছর ঈদে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী সিটি সার্ভিস বাসগুলো ঈদের দুই দিন আগে থেকে যেকোনো গন্তব্যে গেলে ঈদ বকশিসের নামে ৫০ টাকা হারে যাত্রীর মাথাপিছু ভাড়া আদায় করে থাকে। এবারও ঈদের আগের ২ দিনে ঢাকার ৪ হাজার সিটি বাসে ৪৮ লাখ ট্রিপ যাত্রীর কাছ থেকে গড়ে মাথাপিছু ৩০ টাকা হারে বাড়তি নিলে এইখাতে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা যাত্রীদের বাড়তি গুনতে হবে।

গণপরিবহন সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সঠিক সময়ে টিকিট না পাওয়া, যানজটসহ নানান ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে এবারের ঈদে প্রায় ১২ লাখ যাত্রী মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। তাদের ৩০ শতাংশ নিজেদের বাইক ব্যবহার করছে। অন্যরা ভাড়ার মোটরসাইকেলে যাত্রী প্রতি গড়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে ৮ লাখ ৪০ হাজার মোটরসাইকেল যাত্রীদের ২৫ কোটি ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। 

ঈদে অতিরিক্ত কোচ, ঈদ স্পেশাল হিসেবে অতিরিক্ত রেল রেক যুক্ত করার পরে ঢাকা ৭ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। দৈনিক ৪০ হাজার যাত্রী নিয়মিত টিকিটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটসহ ৪৬ হাজার টিকিটধারী যাত্রী হিসেবে এক সপ্তাহে তিন লাখ ২২ যাত্রী রাজধানী ছাড়বে। 

এর বাইরে ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে, দুই বগির মাঝে, কোচের ভেতরে বিনা টিকিটে যাতায়াত করবে আরো প্রায় তিন লাখ ৭৮ হাজার যাত্রী। এত বড় সংখ্যক যাত্রী বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণে কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের রাজস্ব হারাবে। কিন্তু চলমান ট্রেনে কর্মরত টিটিই, গার্ড, সরকারি-বেসরকারি স্টুয়ার্ড, বেসরকারি ক্যান্টিন অপারেটরের লোকজন, ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপি, এনআরবি ও স্টেশনে দায়িত্বরত টিকিট চেকারদের যাত্রী প্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। 

আকাশ পথে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজে ঈদের ১০দিন আগে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব চললে। কোনো কোনো পথে দিগুণ তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় চলছে। সমিতির হিসেবে ঈদের আগে লক্ষাধিক যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশপথ ব্যবহারে যাত্রী প্রতি গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিলে ৩৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া লুটে নেবে। 

সদরঘাট নদীবন্দরসহ বিভিন্ন লঞ্চ ও খেয়াঘাটে নৌ-পথে যাতায়াত ও খেয়া পারাপারের যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে ঈদ উপলক্ষে ২ টাকার মাসুল ঘাট ইজারাদারের লোকজন ১০/২০ টাকা হারে আদায় করে থাকে। এ সময়ে পণ্য নিয়ে খেয়া পারাপার বা লঞ্চে আরোহণে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত কুলি মজুরি চার্জ দাবি করা হয়। খেয়া পারাপারে ঈদবাজারের প্যাকেট প্রতি মাসুল দাবি করা হয়। 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেব বলছে, এবারের ঈদে সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের আশেপাশে খেয়া পারাপারে ১৪ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হবে। এসব যাত্রীর মাথাপিছু ১০ টাকা হারে বাড়তি হিসেবে ১৪০ কোটি টাকা বাড়তি মাসুল ঘাট ইজারাদারের লোকজন বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লুটে নেবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ