প্রকল্পের ছড়াছড়ি অফিস সহায়কের গ্রামে

সারাদেশ
  © সংগৃহীত

চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ যশোর জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিনের গ্রাম। আশপাশের গ্রামে তেমন বরাদ্দ না মিললেও গত কয়েক বছর ধরে স্বরুপদাহতে জেলা প্রশাসনের প্রকল্পের অভাব নেই। নিয়মের বাইরে একই প্রতিষ্ঠান বারবার বরাদ্দও পেয়েছে। একাধিক প্রকল্পফলকে আবার রয়েছে সরোয়ারের নাম। এলাকায় প্রচার, সরোয়ারই বরাদ্দ দিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু নিজের গ্রাম নয়, জেলা পরিষদেও রয়েছে তাঁর দাপট। অফিস সহায়ক পদে থাকলেও ছড়ি ঘোরান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরে। 

অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ গ্রামে প্রকল্প দিলেও সরোয়ার নেন মোটা অঙ্কের ঘুষ। আবার সেই টাকাও ব্যবহার হয় নিজের ইচ্ছামতো। সরোয়ারের এমন বেপরোয়া চলাচলের পেছনে রয়েছে কিছু জনপ্রতিনিধি ও কতিপয় কর্মকর্তা। এ কারণে জেলা পরিষদের বড় কর্তারা ব্যবস্থা তো দূরে থাক, সরোয়ারকে সমীহ করে চলেন। 

অবশ্য সরোয়ারের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। সুযোগ ছিল তাই এলাকার মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এলাকায় একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোনো অনিয়ম হলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন। আর প্রকল্পফলকে নিজের নাম লেখা নিয়ে বলেন, এটা উচিত হয়নি। বুঝতে ভুল করেছেন। তবে ফলক থেকে নাম মুছে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার। 

স্বরুপদাহ গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ঈদগাঁ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রাস্তার উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জেলা পরিষদ। ২০১৬-২০১৭ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এই গ্রামে প্রায় ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। প্রত্যেকটি প্রকল্পের ফলকে নিজের নাম লিখেছেন সরোয়ার। জেলা পরিষদের টাকায় এলাকায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন ‘দানবীর’ হিসেবে। 

গত ৮ বছরে স্বরুপদাহ গ্রামে কত টাকার মোট প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই তথ্য অবশ্য দিতে পারেনি জেলা পরিষদ। তবে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বরুপদাহ সরদারপাড়া ঈদগাহ ময়দান উন্নয়নে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বরুপদাহ গ্রামের শাহ আলমের বাড়ি থেকে তরিকুল সরদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সলিংয়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। রাস্তার নামফলক রয়েছে শাহ আলমের বাড়ির উঠানে। এই শাহ আলমের সঙ্গে সরোয়ারের রয়েছে গভীর সখ্য। আবার সড়কটি নির্মাণের সময় জোর করে পাশের জমির ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণে ৩ লাখ টাকা, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে স্বরুপদাহ হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ৩ লাখ টাকা এবং ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই মাদ্রাসায় ১০ লাখ টাকা করে, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বরুপদাহ পূর্বপাড়া ঈদগাহে ৩ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বরুপদাহ সরদারপাড়া ঈদগাহে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 

নিয়ম অনুযায়ী, একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই অর্থবছরে প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু সেটি মানা হয়নি স্বরুপদাহ গ্রামের একাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে ফের ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই বরাদ্দের টাকায় কাজ না করে শিক্ষকদের ৩ হাজার টাকা করে ঈদের বোনাস, শিক্ষার্থীদের বেতন সমন্বয় ও শিক্ষার্থীদের পিকনিকের ব্যবস্থা করেন সরোয়ার। তিনি এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন। পরে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হতে জেলা পরিষদের টাকা অপব্যবহার করেন। তথ্য গোপন করে সভাপতি হওয়ায় অবশ্য যশোর শিক্ষাবোর্ড তাঁকে অব্যাহতি দেয়। 

গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বকুল বলেন, সরোয়ার ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা পরিষদের টাকা তছরুপ করেছে। প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য ৩০-৪০ শতাংশ হারে ঘুষ আদায় করেছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পফলকে আবার নিজের নাম লিখেছে। জেলা পরিষদের একজন পিয়নের ক্ষমতার উৎস কোথায়? আর নামফলকে কীভাবে তাঁর নাম লেখা হলো– এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।

একাধিক গ্রামবাসী জানান, সরোয়ার পিয়ন হলেও দাপট দেখান কর্মকর্তার। তাঁর বিশাল ক্ষমতা, সেটা প্রমাণ করার জন্যই এসব প্রকল্প নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন।
 
জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকে সরোয়ারের নাম লেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্প বরাদ্দের সঙ্গেও তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি কীভাবে প্রকল্পফলকে নিজের নাম লিখিয়েছেন জানা নেই। 

আর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

তথ্য: সমকাল


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ