বিস্ফোরক টর্পেডো দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছিল গ্রামবাসী, পাহারায় পুলিশ

সারাদেশ
  © সংগৃৃহীত

জোয়ারের পানিতে দেশের উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে হঠাৎই ভেসে আসে যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংসকারী একটি টর্পেডো। রবিবার সকালে রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের মীরকান্দা গ্রাম সংলগ্ন ভাঙা খালে সেটিকে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই এলাকায় বঙ্গোপসাগরের সাথে সরাসরি সংযোগ নিজকাটা খালের। খালের জোয়ারের পানির সাথে এটি ভেসে আসার খবর পেয়ে শত শত স্থানীয় মানুষ এটি দেখতে ভিড় করেন ওই খালের পাশে।

তাদের কারও কারও মধ্যে আতঙ্ক দেখা যায়। কেউ কেউ জানতে পারেন এটি যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংসকারী টর্পেডো। পরে স্থানীয় কিছু মানুষ খালে নেমে দড়ি দিয়ে টর্পেডো সদৃশ ওই বস্তুটিকে ভাসমান অবস্থায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন একটি খুঁটির সাথে।

বাসিন্দারা জানান, এটা যেন লোকালয়ে ঢুকে ক্ষতি করতে না পারে তাই তারা এটিকে নিরাপদ জায়গায় বেঁধে রেখেছেন। খবর পেয়ে পুলিশও আসে ঘটনাস্থলে। তারা বস্তুটিকে বিস্ফোরক ও ক্ষতিকারক মনে করে সরিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দাদের।

রাঙ্গাবালী থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, “নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের বিশেষজ্ঞ দল এটাকে টর্পেডো বলে নিশ্চিত করেছে। এটাকে হয়তো প্র্যাকটিসের জন্য পানিতে নামানো হয়েছিল। তবে এটি কোথা থেকে ভেসে এসেছিল সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।"

লাল সাদা রঙের এই টর্পেডোটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক ২৫ ফুটের মতো বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক কামরুল হাসান।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "স্থানীয় খালে ঢুকে পড়ার পর সেটিকে গাছের সাথে বেঁধে আটকে রেখেছে। পরবর্তীতে আমরা নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডকে জানিয়েছি।" ২৫ ফুট লম্বা লাল সাদা একটি বস্তু ভেসে যেতে দেখেন স্থানীয় কিছু শিশু কিশোর ও কয়েকজন জেলে। তারা প্রথমে বস্তুটিকে চিনতে পারেনি।

মৌডুবি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বলেন, “স্থানীয় ঐ শিশু-ৈকিশোর ও বাসিন্দারা তখন এটিকে জোয়ারের পানিতে ভাসিয়ে বস্তুটিকে সাগর থেকে খালের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। পরে সেটি মৌডুবি এলাকার ভেতরে খালের মধ্যে চলে আসে।”

তখন এই খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। কেউ কেউ লাইভও করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তখন তা দেখে কেউ কেউ মন্তব্য করেন এটি সাবমেরিন। কেউ কেউ ধারণা দেন এটি যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংসকারী টর্পেডো।

মৌডুবি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মি. হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “খালে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর আমরা সাড়ে এগারোটার দিকে নিউজ পাই। এরপর নিউজ পেয়েই আমরা প্রশাসনকে জানাই।”

এই খবর পেয়ে প্রথমে সেখানে আসে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ। পরে রাঙ্গাবালী থানা থেকে দুপুর বারোটার দিকে পুলিশের একদল সদস্য আসেন। তারাও প্রথমে ঠিক ধারণা করতে পারেননি আসলে বস্তুটি কী। তবে স্থানীয়ভাবে খবর ছড়িয়ে পড়ে সাগর থেকে মিসাইল জাতীয় কিছু একটা ঢুকে পড়েছে খালে।

স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হোসেন বলেন, "এটি কোথা থেকে কী কারণে এসেছে আমরা সঠিক জানি না। তবে বস্তুটি দেখতে ভারী অস্ত্রের মতো মনে হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে।"

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে এটাকে দেখেছেন। সোমবার দিনের বেলায় এটা এখান থেকে অপসারণ করা হবে। এটা বিস্ফোরিত হওয়ার মতো কোনও অবস্থানে নাই। যে কারণে খুব বেশি রিস্কে নাই।”

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা, খালের মধ্যে ঢোকার পর দুজন ব্যক্তি সেটিকে একটি দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখার চেষ্টা করেন। পরে খালে ভাসমান অবস্থায় সেটিকে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। আস্তে আস্তে বেলা যত বাড়তে থাকে তখন খালপাড়ে এটিকে দেখতে জড়ো হয় হাজারো মানুষ।

তারা এসময় গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি অদ্ভুত, কিন্তু তাদের জন্য আতঙ্কও রয়েছে বলে তারা মনে করেন। তাই তারা দ্রুত এটিকে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান। রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পরই কোস্ট গার্ড নৌবাহিনীর সাথে কথা বলেছি। তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে এটি নিয়ে তাদের তৎপরতা শুরু করে।"

সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে যখন টর্পেডোটি এই খাল দিয়ে প্রবেশ করে তখন পূর্ণ জোয়ার ছিল খালে। তখনো পুরোটি ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না।

বিকেলের পর ভাঁটা শুরু হলে আস্তে আস্তে খালের পানি নামতে শুরু করে।গাছের সাথে বেঁধে রাখার কারণে খালের পানি নেমে যাওয়ার পর পুরো বস্তুটি দৃশ্যমান হয়। তখন এটি দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আরও আতঙ্ক বাড়ে। বিকেলে প্রথমে ঘটনাস্থলে আসে কোস্ট গার্ডের একটি দল। তারা তৎপরতা শুরু করলে উপস্থিত এলাকার বাসিন্দারা ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে সরে যায়।

কোস্টগার্ডের টিম আসার আগ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি এটি আসলে কী। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের স্থানীয় সাংবাদিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এটিকে টর্পেডো-সদৃশ বস্তু বলেই ধারণা দেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কোস্টগার্ড টিম এসে নিশ্চিত করে এটি যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংসকারী অস্ত্র টর্পেডো।

রাঙ্গাবালী থানার ওসি মি. উদ্দিন জানান, “আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে নিরাপত্তার স্বার্থে এটি থেকে সবাইকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে কোস্ট গার্ডকে বিষয়টি অবহিত করা হলে ছবি দেখে তারা প্রাথমিকভাবে জানায় এটি টর্পেডো হতে পারে।"

তিনি আরও জানান, "টর্পেডো ডুবন্ত থাকে, কিন্তু যেহেতু এটি ভেসে ছিল সে কারণে তারাও প্রথমে এটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ছবিতে ভেসে থাকতে দেখে তারা ভেবেছিল এটি অব্যবহৃত।" কিন্তু কোথা থেকে হঠাৎ এই টর্পেডো পটুয়াখালীর খালে আসল সেটি নিয়ে এক ধরনের কৌতূহল ছিল।

রবিবার সন্ধ্যায় রাঙ্গাবালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা  জানান, তারা যখন নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন তখন নৌবাহিনী তাদের বলেছিল এটি তাদের কোনও সমরাস্ত্র হতে পারে। বরিশালের নৌবাহিনীর আঞ্চলিক একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন রাঙ্গাবালীর খালে পাওয়া বস্তুটি টর্পেডো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ কর্মকর্তা জানান, এটি তাদের কোনও সমরাস্ত্র না সেটি তারা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে এটি নিয়ে তিনি গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চাননি।

তবে, কোস্টগার্ড রাঙ্গাবালী আউটপোস্টের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, “টর্পেডোর মাঝখানে যেভাবে জোড়া থাকে, ওটারও তা আছে।”

তথ্য: বিবিসি বাংলা


মন্তব্য