বিষণ্ণতায় ভুগছে উপকূলের ২২ শতাংশ মানুষ: গবেষণা

উপকূল
  © সংগৃহীত

উপকূলীয় মানুষের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাবে মানসিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করা ২২.৪৮ শতাংশ মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছে। এ ছাড়া ৪৩.৯৫ শতাংশ মানুষের ভালো ঘুম হয় না। মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফরমের এই যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব শীর্ষক’ গবেষণায় গুরুতর দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ, মানসিক বৈকল্য এবং ঘুম না হওয়ার মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে ২৫.০৭ শতাংশ, বিষণ্ণতায় ভুগছে ২২.৪৮ শতাংশ, মানসিক চাপে আছে ৪৯.৪২ শতাংশ, দুর্ঘটনা-পরবর্তী মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে ২০.০৩ শতাংশ মানুষের। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের ৪৩.৯৫ শতাংশ মানুষের ভালো ঘুম হয় না বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, খুলনার শ্যামনগর এলাকায় এই সমীক্ষা চালানো হয়।

এলাকাটি নিম্নভূমি হওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, উপকূলীয় বন্যা এবং উপকূলীয় ক্ষয়ক্ষতির মতো প্রাকৃতিক বিপদের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, গবেষণায় তা উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, সেবা প্রদানকারীদের পেশাদারির ঘাটতি, সীমিত আর্থ-সামাজিক সহায়তা, ওষুধের ঘাটতি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপ্রতুলতা এবং নাগালের বাইরে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়।

তাঁরা জানান, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রায় নানা সমস্যার সম্মুখীন। তাদের জীবিকার সীমাবদ্ধতা, উচ্চ অভিবাসনের হার এবং সামাজিক দ্বন্দ্বের মতো সমস্যা রয়েছে। তারা এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে। যেমন—ঋণ গ্রহণ, বিকল্প জীবিকা, কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ নেওয়া, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া ইত্যাদি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

এগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার বিধান বাড়ানো, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা, কাউন্সেলিং ইউনিট স্থাপন করা এবং ন্যাশনাল আডাপ্টেশন প্ল্যান (ন্যাপ) জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযোজন পরিকল্পনার সঙ্গে একীভূত করা। আরো সুপারিশের মধ্যে রয়েছে দুর্বল জনগোষ্ঠীর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, নীতি এবং আইনি কাঠামোর পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা বিধানগুলো উন্নত করা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এটা ভালো যে একটা বেসলাইন স্টাডি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের আরো প্রভাব জানতে এখন আমাদের পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের (এনআইএমএইচ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সমন্বয়মূলক প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের ব্যক্তিত্বের নানা সমস্যা দেখা যায়। গবেষণা পরিচালনা করার সময় গবেষকদের বিষয়গত গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ডা. ড্যানিয়েল নোভাক টেলিমেডিসিনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিপজ্জনক। সুইডেনে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ প্রভাব জেনে তাদের বাচ্চাদের হত্যা করার মতো উদাহারণও রয়েছে।


মন্তব্য