বৃষ্টির আশায়

ধর্মীয় রীতি মেনে অনুষ্ঠিত হলো ব্যাঙের বিয়ে

বৃষ্টি
  © সংগৃহীত

এপ্রিলের শুরু থেকেই দাবদাহে পুড়ছে দেশ। ৭৬ বছরের ইতিহাসে টানা তাপপ্রবাহে রেকর্ড গড়েছে। কয়েক জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা। সারা দেশের মানুষের গরমে হাসফাস অবস্থা। এমতাবস্থায় বৃষ্টির জন্য উন্মুখ হয়ে আছে অধিকাংশ জনগণ। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টির আশায় অনুষ্ঠিত হয় ব্যাঙের বিয়ে। চারদিকে বাজছে বিয়ের শানাই। বরকে বিয়ের সাজে সজ্জিত করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো কনের বাড়িতে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে আগে থেকেই বধূ সেজে থাকা কনের সঙ্গে হয়ে গেল বিয়েও। কিন্তু এটি কোনো মানুষের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে স্বস্তি পেতে রাজশাহীর পবা উপজেলার ভুগরোইল খ্রিস্টানপাড়ায় বৃষ্টির জন্য আয়োজন করা হয়েছিল দুই ব্যাঙের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় এমন ব্যতিক্রমী বিয়ের অনুষ্ঠানে পবা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ভুগরোইল খ্রিস্টানপাড়ায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নানা বয়সী শত শত আদিবাসী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তারা দুটি পুরুষ ও স্ত্রী ব্যাঙ ধরে তাদের বিয়ে দেয়।

খ্রিস্টান পল্লীর মানুষজন প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টির আশায় নানা গান ও গিতের তালে তালে নেচেছেন। অনুষ্ঠানের সময় খেলেছেন রঙও। সর্বশেষে দুপুরে তারা বিবাহিত ব্যাঙ দুটিকে কলাপাতার বাক্সে ভরে বালতিতে নিয়ে পুরো খ্রিস্টান পল্লীতে ঘুরে বেড়ান আর নাচেন। সঙ্গে ছিল ঢোল আর বিয়ের শানাই। যেন সত্যি সত্যি খ্রিস্টান কোনো তরুণ-তরুণীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সেখানে। এসময় আদিবাসী পল্লীর মানুষজনের কাছ থেকে চাল, ডাল, মুরগি ও মসলা সংগ্রহ করে খাবারের আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের বিয়ের অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ছিলেন স্থানীয় খ্রিস্টান পল্লীর অঞ্জলী বিশ্বাস। মূলত তিনিই ফাদার সেজে পুরুষ ও নারী ব্যঙের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। কনেপক্ষে কনে ব্যাঙের মা স্থানীয় নওহাটা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জয়া বিশ্বাস। বিয়ের এই পুরো আয়োজেন খ্রিস্টান পল্লীর গ্রামবাসী তাদের সহযোগিতা করেন।

আয়োজক অঞ্জলী বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টির জন্য চারদিকে হাহাকার। কোথাও পানি নেই। মুসলমানরা বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করছেন। কিন্তু তারপরও বৃষ্টি হচ্ছে না। আগে বৃষ্টির জন্য ব্যঙের বিয়ের আয়োজনের বেশ প্রচলন ছিল। কিন্তু এটি এখন অনেক কমে গেছে। তাই পুরনো সেই রীতি ধরে রাখতে বৃষ্টির আশায় আমাদের এই আয়োজন।

কনে ব্যাঙের মা জয়া বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় রাজশাহীসহ সারাদেশ আজ মরুভূমি হয়ে গেছে। রাজশাহীর বেশ কিছু এলাকায় নলকূপে মানুষজন পানি পাচ্ছে না। খাবার পানি, সেচের পানি যোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছে, পুকুর শুকিয়ে গেছে। তাই আমরা বৃষ্টির জন্য আমরা এই আয়োজন করেছি।

তিনি বলেন, স্থানীয় খ্রিস্টান চার্চ থেকে পুরুষ ব্যাঙকে সাজিয়ে একটু দূরেই আমাদের নিজের বাড়িতে বধূ সাজে সাজিয়ে রাখা কনে ব্যাঙের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই ব্যাঙের মধ্যে দেয়া হয় বিয়ে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুনরায় শানাই আর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বর কনেকে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় সেই চার্চে। পরে ব্যাঙ দুুটির বিয়ের পোশাক খুলে ফেলে গোসল করিয়ে ছেড়ে দেয়া পুকুরে। এরপর আমরা রঙ খেলা এবং নাচ-গান শেষে রান্না-বান্না করে পুরো গ্রামবাসী একসাথে দুপুরের খাবার খাই।

তথ্যসূত্র: কালবেলা


মন্তব্য