তারাগঞ্জে “সততা যুব সংঘ বরাতী" ক্লাবের হরণকৃত গাছ উদ্ধার

রংপুর
  © সংগৃহীত

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বরাতী চড়কডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন “সততা যুব সংঘ বরাতী” এর লাগানো গাছ অবৈধ ভাবে হরণ হওয়ায় গাছটি উদ্ধার করেছে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ। ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহে আলম (জুয়েল) ক্লাবের নামীয় জমি, ক্লাবঘর অবৈধ দখল রোধে ও গোপনে কর্তনকৃত ক্লাবের কাঠাল গাছ উদ্ধারের জন্য তারাগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং- ০৫/২৪, তারিখ-০৪ মে ২০২৪ ইং ।

জানা গেছে, গত (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত (২৪ এপ্রিল) ২০২৪ইং রাত আনুমানিক ২ টায় রাতের আঁধারে কাঠাল গাছটি কর্তনের খবর পেয়ে মাহে আলম জুয়েল ঘটনাস্থল থেকে আইনী সহায়তার জন্য ৯৯৯ কল করেন। রাত তখন প্রায় ২টা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পান এবং দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় সমাধানের নিমিত্তে গাছ কাটার বিষয়টি স্থগিত করান।

কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর উক্ত রাতেই বিবাদী আশরাফুল ও তার সহযোগীগণ গাছটি কর্তন করে ডালপালা সরিয়ে ফেললেও মূল গাছটি সরাতে ব্যর্থ হন। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় সমাধানের নিমিত্তে জমির মালিকানা বৈধতা যাচাইয়ের জন্য দুই পক্ষকে থানায় আসতে বলা হলে বিবাদীর কাগজপত্রে জালজালিয়াতির একটি বিভ্রান্তিকর বিষয় উঠে আসে। 

এমন পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহ অতিক্রম হলে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত ২৪ এপ্রিল থেকে ০৪ মে পর্যন্ত অতিক্রান্ত ঘটনা অনুসন্ধান ও দায়েরকৃত মামলার নিয়মিত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় এসআই কনক রঞ্জন বর্মণ ও সঙ্গীয় ফোর্স তদন্তকালে ঘটনাস্থল থেকে ডালপালা বিহীন গাছটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

বাদী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিবাদী আশরাফুল ও তার সহযোগীগণের সাথে ক্লাবটির অবৈধ দখল রক্ষায় বিভিন্ন বিরোধ চলমান। এর মধ্যেই রাতের আঁধারে ক্লাবের জমিতে থাকা কাঠাল গাছটি বিবাদীগণ আত্মসাতের অশুভ চেষ্টায় কেটেঁ ফেলে।

জমিটির জালজালিয়াতির বিষয় জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলাধীন ইকরচালি মৌজার ১০৭২ দাগে ৩২ শতাংশ জমির মধ্যে ৪ শতাংশ জমির অংশীদার প্রাপ্ত হওয়া জাহানারা বেগম ৩০/০৫/১৯৯৬ইং সালে বরাতী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ৩ শতাংশ (দলিল নং- ১৪৪৫/৯৬) এবং ২৬/০২/১৯৯৭ ইং সালে মোঃ ফারুক হোসেনকে ০১ শতাংশ (দলিল নং- ৭৫৪/৯৭ ) জমি দলিলমূলে বিক্রি করেন। পরে “বরাতী উচ্চ বিদ্যালয়” ও “সততা যুব সংঘ বরাতী” উভয়পক্ষ পারস্পরিক সুবিধায় ৩/৫ শতাংশ আনুপাতিক অবস্থানে ১৮/০৯/১৯৯৬ইং সালে বিনিময় দলিল করেন (দলিল নং-২৯৫০)।

উল্লেখ্য যে, বিবাদী আশরাফুল (উপজেলা প্রতিনিধি দৈনিক সংবাদ) জাহানারা বেগম কর্তৃক ০২/০৫/২০১৯ ইং সালে গ্রহীত যে দলিল দাবি করেন, তা একটি বড় ধরনের বিভ্রান্তি ও জাল জালিয়তি (দলিল নং-১৪৭৫/১৯ )। 

কারন পারিবারিক ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদেয় মৃত্যু সনদ সূত্রে দেখা যায়, জাহানারা বেগম গত ২০/০৯/২০১৩ ইং শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারনে মৃত্যু বরণ করেন। স্থানীয়ভাবে মৃত জাহানারা বেগমের কাছ থেকে আশরাফুলের দলিল গ্রহণের বিষয়টি জনমনে দেখা দিয়েছে একটি প্রশ্ন!

এদিকে বিবাদী আশরাফুলকে হয়রানি দেখিয়ে, “সততা যুব সংঘ বরাতী” ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বাদী হয়ে দায়ের করা মামলা ও জমি সংক্রান্ত দালিলিক বিভ্রান্তির মূল ঘটনা এড়িয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে সংবাদ প্রকাশের জের ও তারাগঞ্জ থানা পুলিশকে যোগসাজশের দায় দেখিয়ে গণমাধ্যম শৃঙ্খলার বস্তুনিষ্ঠতা খর্ব করে (৫ মে ২০২৪ইং রবিবার) জেলা বার্তা পরিবেশক, রংপুর কর্তৃক “দৈনিক সংবাদ” পত্রিকায় “খবর প্রকাশের জের, সংবাদের তারাগঞ্জ প্রতিনিধির বাড়িতে পুলিশের তান্ডব” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এমন সংবাদ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ দাবি করেন।

এ ঘটনায় বিবাদী আশরাফুল মোবাইল ফোনে বলেন, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহে আলম রাতে গাছ কাটার বিষয়ে জরুরী পুলিশ পরিসেবা ৯৯৯ কল করে রাস্তার গাছ কাটার কথা বলেছিল, পুলিশ রাত আনুমানিক ২ ঘটিকায় এসে দেখেন আমার উঠানের গাছ কাটছি। আমার গাছ আমি কখন কাটবো তা পুলিশ নিষেধ করার কে? ৬/৭ বছর পূর্বে মৃত ব্যক্তির জমি কিভাবে ক্রয় করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সাব-রেজিষ্টার আর দলিল লেখকের ব্যাপার, আমি তো শুধুমাত্র দলিলের মালিক। তিনি আরও বলেন, উপজেলা ভূমি কমিশনার (এসিল্যাণ্ড) আমাকে জমির খারিজ করে দিয়েছে। তবে শেষে তিনি বলেন, ভূমি আইনে বিচারক যদি দুই কলম লিখে দেন আমি অবৈধ দখলদার তাহলে আমি সাথে সাথেই আমার জিনিষপত্র নিয়ে জমি থেকে সরে আসবো।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কনক রঞ্জন বর্মন বলেন, গত ২৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে রাত্রি আনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় জাতীয় পরিসেবার ট্রিপল নাইনের তথ্যে ও ওসি জহুরুল ইসলাম স্যারের নির্দেশনায় বরাতি চড়কডাঙ্গা বাজারে ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতের আঁধারে একটি ক্লাবের গাছ কাটার সত্যতা পাই এবং গাছটির না কাটার আহ্বান করি । পরে ৪ মে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক মাহে আলম কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে নিয়ম তান্ত্রিকভাবে ঘটনার স্থলে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি ও ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ডালপালা বিহীন কর্তনকৃত গাছটি পেয়ে আলামত হিসেবে জব্দ করি। বর্তমান মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।

এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, গত ০৪/০৫/২৪ ইং “সততা যুব সংঘ বরাতী” এর সাধারণ সম্পাদক মাহে আলম ক্লাব সংক্রান্ত একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনাকালে থানা পুলিশ অভিযোগে থাকা গাছটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষে অহেতুক কতিপয় অসাধু ব্যক্তিবর্গ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাছাড়া আমি গত ০৪ মে শুক্রবার থেকে ০৬ মে সকাল পর্যন্ত চিকিৎসা জনিত ছুটিতে ছিলাম। মামলার বিষয়টি অবগত আছি। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করবেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ