তিন প্রার্থী আওয়ামী লীগের, ভোট দেওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোটাররা

জয়পুরহাট
কালাই উপজেলা নির্বাচন  © ফাইল ছবি

জয়পুরহাটের কালাইয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কালাইয়ের জনসংখ্যার উপস্থিতি বেড়েছে। নির্বাচন ঘিরে প্রকাশ্যে এমন উৎসবমুখর চিত্র পুরো উপজেলা-জুড়ে ফুটে উঠেছে। তবে অনেক ভোটারের মধ্যে রয়েছে চাপা আতঙ্ক। আগামী (৮ মে) বুধবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন কিনা-তা নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন তারা।

দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলাল ও মিলন তাদের ক্যাডারদের দিয়ে সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া নিয়ে ভয় ও আতংক বিরাজ করছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। এমনকি সুষ্ঠ ভোট নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন কোনো কোনো প্রার্থী। শনিবার সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত উপজেলার নির্বাচনী এলাকায় ভোটার ও প্রার্থীদের সাথে আলাপকালে এইসব তথ্য পাওয়া যায়।

জানা যায়, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য কালাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনবারের চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনফুজুর রহমান মিলন (মোটরসাইকেল মার্কা), সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার বেলাল (আনারস মার্কা) ও মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি সাবিনা হাবিব তালুকদার (ঘোড়া মার্কা) নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে নেমেছেন। এ নির্বাচনে মূলত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিনফুজুর রহমান মিলন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার বেলালের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন। তাদের পাল্টাপাল্টি উত্তেজনাকর প্রচারণা ও হুমকিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নানা কুরুচিপূর্ণ ও আক্রমনাত্মক বক্তব্যসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভীতি লক্ষ্য করা গেছে। 

ঘোড়া মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবিনা হাবিব তালুকদার নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে, তবে মোটরসাইকেল মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন এক পথসভার বক্তব্যে বলেন তিনি এক ভোট পেলেও বিজয়ী হবেন ,  এটা কিভাবে সম্ভব ?? 

আনারস মার্কার প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার বেলাল অভিযোগ করে বলেন, তাঁর পক্ষে থাকা আওয়ামী লীগের শতাধিক কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মিলন বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি মোটরসাইকেল মার্কার প্রার্থী মিলন নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে করতে ভোট কেন্দ্র দখল ও কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সীল মেরে নেওয়াসহ নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।

অপরদিকে মোটরসাইকেল মার্কার প্রার্থী মিনফুজুর রহমান মিলনও অভিযোগ করে বলেন, তাঁর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অবস্থান নেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম বেলাল তাঁর সমর্থকদের বিভিন্ন বক্তব্যে হুমকি-ধামকী দিয়ে আসছে। সুষ্ঠু ভোটকে বানচালে রত রয়েছে। প্রশাসন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শালগুন গ্রামের ভোটার আনোয়ার হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি হুমকির অভিযোগের খবর শুনে ভোটাররা ভোট প্রদানে উদ্বিগ্ন। কেননা, বিগত নির্বাচনগুলোতে এই উপজেলায় হত্যাসহ একাধিক সহিংসর ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলাল ও মিলন কর্মী-সমর্থকরা সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে।  

নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় ও ভয়ভীতি দেখানো ক্যাডারদের বিষয়ে জানতে চাইলে কালাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াসিম আল বারী বলেন,ভোট নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের বিশেষ টিম সোমবার দিবাগত রাত থেকে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবুল হায়াত বলেন, ভোট দেখে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুষ্ঠ ভোট ও ভোটাররা ভয়ভীতি ছাড়াই নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে যেন ভোট দিতে পারেন তার জন্য আমাদের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষনিক ভোটকেন্দ্রগুলো মনিটরিং করবে। কেউ ভোট দেখে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভোট বাতিল এবং কোনো প্রিজাইডিং অফিসার কোনো প্রার্থীর দ্বারা প্রভাবিত হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ আইন দ্বারা এ্যাকশন নেওয়া হবে।


মন্তব্য