রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কক্সবাজার
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং  © টিবিএম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং, পরিদর্শনকালে তিনি জানিয়েছেন- বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে আছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়াও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা কার্যক্রমে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতাও অব্যাহত রাখা হবে।

বুধবার (২২ মে) পেনি ওং এর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান এবং পরিদর্শন করেন। প্রথমে ক্যাম্পের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ক্যাম্পের চারদিকে পরিবেশ ও পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ৮ নম্বর ক্যাম্প থেকে যান ১৮ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে।

এর আগে একইদিন সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এরপর সড়কপথে ৩৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে যান তিনি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার প্রতিনিধি দল নিয়ে বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ সময় তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সেবা কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেন।

রোহিঙ্গা নারীরা অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আশ্রয়শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পানীয় জলের সংকট, নারী-শিশুদের দুর্ভোগ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত-লড়াই এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নানা দিক তুলে ধরেন।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছায়। পরে ৮ নম্বর ওয়েস্ট ক্যাম্পে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় এবং জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তারা। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৮ নম্বর ক্যাম্পে অবস্থিত রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করেন। এ সময় কালচারাল সেন্টারে একদল রোহিঙ্গা তাদের ভাষায় গান পরিবেশন করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধি দল ক্যাম্পের চিকিৎসাসেবা ও রোহিঙ্গাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। 

আরআরআরসির সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টায় উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পৌঁছান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথমে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) একটি উঁচু জায়গায় নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে পুরো শরণার্থীশিবির দেখেন তিনি। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এ এস এম ওবায়দুল্লাহ। তিনি আশ্রয়শিবিরে সরকারি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

এরপর ওই আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। শেষে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যান পাশের বালুখালী আশ্রয়শিবিরে। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘের আইওএম পরিচালিত রোহিঙ্গা কালচারাল মেমোরি সেন্টার, হাতিরডেবা আশ্রয়শিবিরের হেলথপোস্ট, হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের ইউনিসেফ-ব্র্যাক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন।

কালচারাল সেন্টারে কয়েকজন রোহিঙ্গা শিল্পী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংকে তাঁদের আঞ্চলিক ভাষার গান শোনান। গান শুনে মুগ্ধ হন তিনি। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা নারীদের তৈরি হস্ত ও কুটিরশিল্প দেখেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঢাকায় ফিরে যান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার আল্লামা সিদ্দিকী তাঁর সঙ্গে ছিলেন।