সেলাই মেশিন দেয়ার পর ফটোসেশন শেষে ফেরত নিলেন প্রকৌশলী!

সেলাই মেশিন
  © ফাইল ছবি

সই নিয়েছে, ছবিও তুলা হয়েছে ঘটা করে অথচ সেলাই মেশিন বুঝিয়ে দেয়া হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের ১১ প্রান্তিক হত দরিদ্র নারীকে। সরকারি প্রকল্পের আওতায় তাদের এ সেলাই মেশিন দেয়ার কথা ছিলো। এমন অভিযোগ উঠেছে জেলার ভোলাহাট উপজেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আছহাবুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এদিকে, সই নেয়া ও ছবি তোলার পর অন্তত আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও ভুক্তভোগী ১১ নারী এখনো বুঝে পাননি সেলাই মেশিন। সম্প্রতি এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগে জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্পের টাকায় সেলাই মেশিন দেয়ার কথা বলে তাদের ডাকা হয় উপজেলাতে। তাদের সামনে সেলাই মেশিনগুলো রেখে ছবিও তোলেন উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আছহাবুর রহমানসহ জনপ্রতিনিধিরা। পরে ওই মেশিনগুলো তাদের না দিয়ে ফেরত নিয়ে নেয়া হয়।

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ-বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নারী উন্নয়ন ফোরামের জন্য মোট প্রাপ্ত বরাদ্দের ৩ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। যার পরিমান ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর এ টাকা দিয়ে ২৭টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যথাযথ নিয়ম অনুসারে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদার নির্বাচিত হন। তবে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের মার্চ মাসে।

সেলাই মেশিন পাননি এমন একজন নারী ভোলাহাট উপজেলার মিম আক্তার। তিনি বলেন, সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে একটি সরকারি সেলাই মেশিনের আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি জমা দিয়েছিলেন। তবে ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সেই সেলাই মেশিন। তবে জুটেছে প্রহসন। উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে মুঠোফোনে ডেকে সামনে সেলাই মেশিন রেখে ছবি তুলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ চিত্র শুধু মিম আক্তার নয় ভুক্তভোগী চারমিস খাতুন, আফরোজা খাতুন, রাশিদা খাতুন, সুরমাসহ বাকি নারীদেরও একই চিত্র। সেলাই মেশিন দেয়ার নামে উপজেলা পরিষদে ডেকে মেশিনগুলো সামনে রেখে সই নিয়ে ছবি তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন উপজেলা প্রকৌশলী আছহাবুর রহমান।

ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা গরিব মানুষ। বাড়িতেই গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করি দু’চারটা। কিন্তু দৈনিক আয়ের কোন উৎস নেই। তাই কেউ সেলাই মেশিন চালানো শিখেছিলেন। আবার কেউ দৈনিক আয়ের উৎসব হিসেবে শিখছেন। কিন্তু সেলাই মেশিন কেনার সামর্থ নেই তাদের। পরে তারা জানতে পারেন উপজেলা থেকে সরকারি সেলাই মেশিন দেয়া হবে। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি জমা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু ঘটা করে ছবি তুললেও আর দেননি সেলাই মেশিন। পরে দেবো বলে এখনও কোন খবর নেয়।

এখানেই শেষ নয়, এ প্রকল্পের আওতায় যারা সেলাই মেশিন পেয়েছেন তাদের অভিযোগ সেলাই মেশিনগুলো ছিলো নিম্নমানের। উপজেলার বাহাদুরগঞ্জ গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী মৌসুমী খাতুন জানান, আমার সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন ছিলো। তবে এ মেশিনটি একেবারে নিম্নমানের। কাজ করা যায় না। এমন অচল জিনিস না দিলেও পারতো।

এদিকে, উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের হিসাব সহকারী মকলেছুর রহমান রহমান জানান, যাদেরকে মুঠোফোনে ডাকা হয়েছিলো তাদের সবাইকে সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে। একেকটি সেলাই মেশিনের বাজেট ছিলো প্রায় ৮ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী আছহাবুর রহমান জানান, মেশিনগুলো ঈদুল ফিতরের আগে বিতরণ করা হয়েছে। যারা পেয়েছেন তাদের কাউকেই চিনি না। তবে যাদের তালিকা করা হয়েছে তারা সবাই মেশিন পেয়েছে। আমরা কোন সেলাই মেশিন ফেরত নেয়নি। উল্টো মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়েন উপজেলা প্রকৌশলী। তিনি বলেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এসব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আর কিছুই না।

আর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুন বলেন, মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ প্রকল্পের জন্য ২৭ জনের নাম তালিকাভুক্ত করে এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা ১৬ জনের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। কিন্তু বাকি ১১ জনকে কয়েক দফায় ডেকে সই নিয়ে সেলাই মেশিন সামনে রেখে ছবি তুলে তা ফেরত নেয়া হয়। এই প্রকল্পের ঠিকাদার আব্দুল গণি ও উপজেলা প্রকৌশলীর যোগসাজসে ফেরত নেয়া সেলাই মেশিনগুলো তারা বিক্রিও করে দিয়েছেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাহার আলী প্রাং জানান, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।