চট্টগ্রাম নগরীতে  খুনের দায়ে ফটিকছড়ির যুবকের যাবজ্জীবন 

চট্টগ্রাম
যাবজ্জীবন-প্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ হাসান (৪৫)  © টিবিএম

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে নির্মাণাধীন ভবনের মালিক নেজাম পাশাকে খুনের দায়ে ভবনের কেয়ারটেকার ফটিকছড়ির যুবক মোহাম্মদ হাসানকে (৪৫) যাবজ্জীবন এবং লাশ গুমের অপরাধে তাকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিত মোহাম্মদ হাসান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব আজিমপুর আদর্শবাজার এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে।

রোববার (২৬ মে) চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা এ রায় দেন। জানা যায়, ঘটনার সময় নগরীর খুলশী থানার শতাব্দী হাউজিং সোসাইটির রাসেলের কলোনীতে হাসানের বাসা ছিল। খুন হওয়া ব্যক্তির নির্মাণাধীন ভবনে তিনি কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে কাজ করতেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, জমির হাউজিং সোসাইটির ভিআইপি কাঁচা সড়কে মো. নেজাম পাশা (৬৫) ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে ভবনের কাজ দেখতে এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে সেখানে যেতেন নেজাম। ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর সময় সেখানে মো. হাসানকে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নির্মাণকাজে তার পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নেজামকে বিভিন্ন সময় চাপ দিতেন। এ নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় হাসানকে কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসান ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে সাড়ে চারটা থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টার মধ্যে যেকোন সময় মো. নেজাম পাশাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। নগরের খুলশী থানার জালালাবাদ জমির হাউজিং সোসাইটিস্থ ভিআইপি কাঁচা রোডের শেষ মাথায় আনিসুর রহমানের প্লটের সামনে মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিত্যক্ত পলিথিন, কাদা বালি ও ময়লার স্তুপের ভিতরে ফেলে দেওয়া হয়। নেজাম পাশা ফটিকছড়ি পৌরসভার ধুরং এলাকার বাসিন্দা।

নেজাম পাশাকে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী সেলিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে নগরের খুলশী থানায় ভবনের কেয়ারটেকার মো. হাসানকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর একই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর হাসানকে রিয়াজউদ্দিন বাজার তামাকুমনণ্ডি লেইনে গ্রেফতার করা হয়। সেসময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসান নিজের মালিক নেজাম পাশাকে মূলত টাকার লোভেই হত্যা করে বলে স্বীকার করে। গ্রেফতারের পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দড়ি, গামছা, টেপ, তার, চিরকুটসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.আনোয়ার হোসেন তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি আদালতে হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। একই বছরের ১৯ জুলাই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

আদালতের বেঞ্চ সহকারি ওমর ফুয়াদ বলেন, ১৬ জনের সাক্ষ্য-প্রমাণে ভবন মালিক মো.নেজাম পাশা হত্যা মামলায় আসামি মো. হাসানের বিরুদ্ধে রায়ে খুনের দায়ে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হাসানকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া লাশ গুমের অপরাধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় হাসানকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। সাজা পরোয়ানা মূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে


মন্তব্য