লক্ষ্মীপুরে ‘মৃত্যুর’ নাম্বার পড়েছে ১৫ হাজার গাছে!

গাছ
  © সংগৃহীত

তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে সরকার সারা দেশে গাছ রোপণের প্রচারণা চালালেও লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরণের নামে চলছে গাছ কাটার আয়োজন। সড়কের পাশে ১৫ হাজার ২৪২টি গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নিলাম প্রক্রিয়ার জন্য ওই গাছগুলোর গায়ে ‘নাম্বারিং’ করা হয়ে গেছে।

রামগতি-কমলনগরের আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের সবুজ বেষ্টনীর আওতায় বন বিভাগের ১৫ হাজার গাছ ২০০৫ সালে লাগানো হয়। গাছগুলো এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য যেন আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করছে। গাছের কারণে পুরো সড়ক ছায়াশীতল ছিল। সড়কটি দেখতে বড় চমৎকার লাগলেও সে দৃশ্য আর দেখা যাবে না। 

সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ২০২০ সালের দিকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় মহাসড়কের পাশে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার গাছ কাটা হয়। ফলে এ দুই সড়কে এখন কোনো গাছ নেই। ফলে তপ্ত রোদে ওষ্ঠাগত অবস্থা হয় পথচারীদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগের আওতাধীন লক্ষ্মীপুর-আলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী সড়কটি ৫.৫০ মিটার থেকে ৭.৩০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। লক্ষ্মীপুর অংশে (লক্ষ্মীপুর-রামগতি) ৫৪ কিলোমিটার সড়কে বন বিভাগের লাগানো গাছ রয়েছে। গাছগুলো কাটার জন্য গেল বছরের নভেম্বরে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। এ সড়কে ২০০৫ সালের দিকে বন বিভাগের লাগানো গাছের সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৪৫।  

এছাড়া রামগতি উপজেলার নুরিয়া হাজিরহাট-নুরু পাটওয়ারী সড়কের দুপাশে সাইড ওয়েন্ডিং করার জন্য ওই সড়কের কেরামতিয়া বাজার থেকে ভুলুয়া ব্রিজ হয়ে পূর্বদিকে চৌরাস্তা হয়ে জোগীর মোড় পর্যন্ত বন বিভাগের লাগানো গাছ কাটার জন্য গেল বছরের ডিসেম্বরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ওই সড়কে বন বিভাগের লাগানো গাছের সংখ্যা ১৬৭২। ২০২১ ও ২০১২ সালের দিকে গাছগুলো লাগানো।  

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-রামগতি-কমলনগর আঞ্চলিক সড়কের পাশে ১৩ হাজার ৪৪৫টি গাছ কাটার জন্য জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি অনুমোদন দেয়। ফলে নিলাম প্রক্রিয়ার জন্য ওইসব গাছে ‘নাম্বারিং’ করা হয়েছে। তবে নিলাম প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি।

লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের কমলনগর উপজেলার চরলরেন্স এলাকার বাসিন্দা আবু নুর বড় মিয়া বলেন, সড়কের পাশে বড় বড় গাছ রয়েছে। দেখতে খুব সুন্দর লাগে। উন্নয়নের নামে গাছগুলো কাটা হলে সাথে সাথে যেন বন বিভাগ আবার বনায়ন করে। আমরা সেই দাবি করছি।

গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ফিরোজ আলম চৌধুরী বলেন, সড়ক প্রশস্ত করার জন্য গাছগুলো কাটা পড়বে। এটা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্তে গাছ কাটা হয় না। 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, গাছ অল্প কয়েকটা, বেশি না। এটাতে কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবে? একটু অ্যানালাইসিস করে দিন। তিনি বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গাছের গোড়াগুলো হালকা, রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। গাছের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার জন্য রোদ ভালো। গাছের ছায়া পড়লে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ছায়ায় রাস্তায় শেওলা পড়ে, দুর্ঘটনা ঘটে। এখানে দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে। গাছ কাটার পর লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গাছ কাটার পর লাগানো হয় না, তা কিন্তু না। ফলের গাছ লাগাতে আমরা উৎসাহিত করি।  

জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, গাছ কাটার আগে গাছ লাগাতে হবে। কিন্তু সবসময় হয়তো এটা হয়ে ওঠে না। সম্প্রতি যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল, এখন গাছ লাগানো খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না। তারপরও বিষয়টা নিয়ে আমরা বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলব।