বন্যা পরিস্থিতি

সিলেট বিভাগে পেছালো এইচএসসি পরীক্ষা

পরীক্ষা
  © সংগৃহীত

বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ৩০ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) শিক্ষা বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ৯ জুলাই থেকে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল সেগুলো যথারীতি হবে।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে সিলেটের ১৩ উপজেলার সবগুলোই এখন বন্যা কবলিত। প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ পানিবন্দী। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় এসব উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগও এখন বিচ্ছিন্ন। তলিয়েছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গরু-মহিষ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকেই। প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন দরিদ্রদের একটি বড় অংশ।

চারপাশে বিস্তীর্ণ জলরাশি। মাঝখানে ছোট্ট একটা দ্বীপের মতো বালুর ঢিবি। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় এখানে পলিথিন বা চাটাইয়ের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে ২০টি পরিবার। ৪০ জন মানুষের সঙ্গে একই ছাদের নিচে আশ্রয় পেয়েছে গৃহপালিত প্রাণীরাও। 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা আদর্শ গ্রামে কমপক্ষে এক হাজার মানুষের বসবাস। ঈদের আগের দিন থেকে হঠাৎই উজানের ঢলে নেমে আসে দুর্যোগ। পানির নিচে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ঈদ উদযাপন নয়, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাঁরা।   

২০২২ সালের বানের তোড়ে ভেঙে যায়, জুলিকা বিবির ঘর। ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধার ঘর এবারের বন্যায়ও ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে। ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঠালবাড়ি গ্রামে নৌকা নিয়ে ঢুকলে এসব করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। অথচ বানভাসি এসব মানুষ এখনো দেখা পাননি, তাঁদের দেখে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের। 

সিলেটে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম পানির নিচে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় ৬৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। 

আশ্রয়কেন্দ্রে আসা এক নারী বলেন,‘চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউই আমাদের কোনো খবর নেয় নাই।’ আরেক যুবক বলেন, ‘ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। গরু-বাছুরসব ভেসে গেছে। সবকিছুই ভেসে গেছে।’ 

অবশ্য জনপ্রতিনিধিদের দাবি ত্রাণ তৎপরতায় চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজির উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা আক্রান্তদের সহায়তার জন্য আমরা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দায়িত্ব দিয়েছি।’  
 
আগামী কয়েকদিন ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে উজানের ঢল কমে আসায় সুনামগঞ্জের সুরমাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি কমছে। ফলে প্লাবিত এলাকা থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। তবে ১১ উপজেলায় এখনও পানিবন্দী প্রায় ৭ লাখ মানুষ।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন ১৯ হাজারের বেশি মানুষ। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এখনও অনেকে আসছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যার্তদের জন্য জেলায় মোট ৫১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, উজানের ঢল কমে আসলেও বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ৪৮ ঘন্টায় নিচু এলাকায় পানি বাড়তে পারে। এ সময় আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে জানান তিনি। 

এদিকে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদরের সাথে তিন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া শহরের প্রায় ৪০ ভাগ তলিয়ে যাওয়া অংশ থেকে পানি কমতে শুরু করলেও ভোগান্তি কমেনি। তবে সদর উপজেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।

অপরদিকে তিনদিন ধরে পানিবন্দী বাসিন্দারা নানা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। কেউ কোনো সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ জানান অনেকে।

লভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কমলগঞ্জে ধলাই নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে প্লাবিত করেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এলাকা, রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের খুশালপুর গ্রামে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নারায়ণপুর, চৈতন্যগঞ্জ, উবাহাটা, খুশালপুর ছয়কুট, বড়চেগ, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, গোপীনগর, আধকানী, কাঁঠালকান্দিসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে।

মনু ও ধলাই নদীর বাঁধের ১৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড।

এ ছাড়া বন্যার পানি প্রবেশ করেছে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ ও জুড়ী উপজেলা পরিষদে। বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কের অনেক স্থানে পানি উঠেছে। বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি রয়েছেন সাত উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। জেলার ৪০ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধলাই নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উজানে ভারত অংশে বৃষ্টি না হলে পানি কমতে শুরু করবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর মনিটরিং হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে সার্বক্ষণিক সেখানে নজরদারি করা হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।’


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ