ছাগলকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্য করলেন ইফাতের মামা

ইফাত
  © ফাইল ফটো

কোরবানি উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে।

এবার ইফাতের ছাগল কেনা নিয়ে নতুন তথ্য জানালেন তারই মামা আবিদ। AX Abid নামে এক অ্যাকাউন্ট থেকে বুধবার (১৯ জুন) রাতে ইফাতকে নিয়ে একটি পোষ্ট করেন। যাতে তিনি লেখেন আমেরিকা প্রবাসী শিল্পপতি মামার জন্য ইফাত ছাগলটি ক্রয় করেন। তিনি দাবি করেন ইফাতের বাবার সঙ্গে তাদের তিন বছর ধরে কোন সস্পর্ক নেই।

ইফাতকে নিয়ে দীর্ঘ পোষ্টে আবিদ আরো লেখেন, ‌‘মানুষের ভালো কাজ কেউ ভাইরাল করে না। ও অনেক পুরস্কার পেয়েছে পাখি পালন করে। কই তখনতো কেউ তাকে ভাইরাল করে নাই। এই ছেলের হাতের আইফোনটি আমি দিয়েছি কারণ আমি তাকে আদর করি। ওর দুটো আপন মামা আছে যাদের একজন দুবাইতে শত কোটি টাকার মালিক। তাদের ছেলে নেই বলে তার সব শখ মামা পূরন করে। আর যে গাড়িগুলোর ছবি দিয়েছে সেগুলো একটা বিক্রি করে আরেকটা কিনছে। ওর মামাদের এত টাকা আছে যে সমস্ত জিনিস গুলো ব্যবহার করে তা কিছুই না। এর চেয়ে বেশি ওর মামারা যাকাত দেয়। মানুষ ওর বাবার যে ছবি দিয়েছে সে তার বাবা না, বাবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই তিন বছর। তাই না বুঝে কারো ক্ষতি না করাই ভালো। ইফাতের আরেক মামা আছে আমেরিকায়। তিনিও শিল্পপতি। ছাগলটি ওর মামার জন্যই কিনেছে। অনুসন্ধান যদি করতে হয় তাহলে আমেরিকা ও দুবাই এসে করলে সবাই বুঝতে পারবে।’

তবে আবিদের ফেসবুক পোষ্ট অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে আবিদ ইফাতের মা শিবলি বেগমের আপন চাচাতো ভাই। সে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। হত্যাকান্ডের কয়েকদিনের মধ্যে তাকে ঢাকা থেকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে আরব আমিরাতে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানায়, ইফাতের আপন কোনো মামা আমেরিকা অথবা দুবাই বসবাস করে না। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের দুলা মিয়া কাজি বাড়ি ইফাতের নানার বাড়ি। নানা মিল্লাত মিয়ার তিন মেয়ে, এক ছেলে। একমাত্র ছেলে নকিব মিয়া দেশে বসবাস করেন। স্থানীয়রা আরো জানায়, গত কয়েক বছর পূর্বে ইফাত তার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।

অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান সম্পর্কে জানা গেছে, তিনিই ইফাতের বাবা। মতিউর দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ। যিনি বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মতিউর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন বসুন্ধরায়। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তারের সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাত। থাকেন ধানমন্ডির বাসায়। আর তার মা থাকেন কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাটে। ইফাতের আরেক বোন ফারজানা রহমান ইস্পিতা থাকেন কানাডায়।

রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ইমপেরিয়াল সুলতানা ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন ইফাত। ইমপেরিয়াল সুলতানা ভবনের নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ইফাত মঙ্গলবার বাসা থেকে বের হয়ে আর আসেননি।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী গণমাধ্যমকে বলেন, ইফাত আমার মামাতো বোন শাম্মী আক্তার শিবুর সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। এটাই সত্যি। ইফাত এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। কিন্তু এখন তিনি কেন তার সন্তানকে অস্বীকার করছেন, তা আমার জানা নেই।

এবার কোরবানির ঈদে ইফাত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার অন্তত সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। গত বছরও কিনেছেন ৬০ লাখ টাকার পশু।

ঢাকার আশপাশে ১০টি খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাত এ বছর সাতটি খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। তবে ফেসবুকে বিতর্কের মুখে সাদিক এগ্রো থেকে কেনা ওই ছাগল তিনি আর বাসায় নেননি। অন্য খামার ও হাঁট থেকে কেনা পশু তিনি ডেলিভারি নিয়েছেন।

উচ্চ বংশের পশু বিক্রেতা সাদেক এগ্রোর মালিকও জানিয়েছে ছাগলটি কেনার জন্য এক লাখ টাকা অগ্রিম দিলেও ইফাত শেষ পর্যন্ত ছাগলটি কেনেননি। এখনো খামারে বিক্রির অপেক্ষায় সেই ছাগল।

এদিকে ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল হওয়ার পর রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান দাবি করেছেন ইফাতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই। কিন্তু ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইফাত তারমামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ