রাস্তার কারণে বিয়ে হয় না যে এলাকার মেয়েদের!

কুমিল্লা
  © সংগৃৃহীত

দেখলে মনে হবে ধান রোাপণ করার উপযোগী ক্ষেত। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় এমনই এক রাস্তার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার পুরোটা একেবারেই কাঁচা। প্রতি বর্ষায় এই রাস্তা যেন অভিশাপ নিয়ে আসে কয়েকটি গ্রামের মানুষের জন্য। গাড়ি তো দূরে থাক, হেঁটে পার হওয়াই মুশকিল। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। বছরের পর বছর কাদায় ডুবে থাকে এই রাস্তাটি। এতে চলাচলে দুঃসহ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগও করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

সড়কটি উপজেলার গালিমপুর ও দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হওয়ার কারণে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত গ্রামবাসী। সড়কের সিংহভাগ অংশ দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের সীমানায় আর বাকি কিছু অংশ গালিমপুর ইউনিয়নের সীমানায়। মূলত এক রাস্তার দুই অভিভাবক থাকায় রাস্তাটি মেরামত হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, সড়কটি উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের ঘোষ্পা গ্রাম থেকে দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া, জোয়াগ হয়ে পাশের উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়ন ও একই ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রাম, গোবিন্দপুর ও সুলতানপুরে মিলেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এই রাস্তার পুরোটাই কাদামাটিতে আবৃত। কাদার কারণে এই রাস্তায় কোনো গাড়ি আসতে চায় না। জরুরি প্রয়োজনে ৩-৫ গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়ায় গাড়ি আনতে হয়। চলাচলাকারীদের জুতা হাতে নিয়ে কাপড় হাঁটু পর্যন্ত তুলে কোনোরকমে পা টিপে টিপে পার হতে হয়। গুরুতর অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে বেগ পেতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সসহ যেকোনো গাড়ির চালক রাস্তার নাম শুনলেই সাথে সাথে না করে দেন। ফলে বাড়তি ভাড়ায় রাজি করাতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মালেক বলেন, আমাদের গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না এই রাস্তার কারণে। অনেক বিয়ের প্রস্তাব ফিরে যায় শুধু এই রাস্তার জন্য। আমার এই বয়সে আমি একবার দেখছি মাটি ফেলতে এই রাস্তায়। এমপি ও আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন বৃষ্টির দিনে এই রাস্তাটি একবার দেখে যাবেন।

দিদার নামের একজন পথচারী বলেন, আমি এই এলাকার জামাই। বৃষ্টির দিনে শ্বশুরবাড়িতে আসলে হাতে জুতা আর প্যান্ট উঠাতে হয় হাঁটু সমান। আমার বিয়ের পর ধরেই দেখি এই রাস্তার অবস্থা এমন।

আবুল কালাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, একবার আমার মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণ দেখিয়ে বরপক্ষ বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে দেন। এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের কাছে বার বার গেছে। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না।

দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ভূইয়া বলেন, রাস্তাটি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু ক্যাটাগরি জটিলতায় গ্রামীণ এ রাস্তাগুলো পাকাকরণ সময় সাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। কাদার মধ্যে ইট ফেললে মানুষের উপকারের চাইতে অপকারই বেশি হবে।

গালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি কয়েক মাস হলো। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এই রাস্তাটির জন্য অবশ্যই কিছু করার চেষ্টা করব।