স্বাভাবিক হচ্ছে উখিয়ার জনজীবন, শঙ্কায় রাত কাটাচ্ছে সংখ্যালঘুরা

উখিয়া
  © টিবিএম

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিভিন্ন রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে শঙ্কায় রাত কাটাচ্ছে সংখ্যালঘুরা। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ তাদের কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট খুলেছেন।

এর আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে ঘিরে উখিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সোমবার পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এ আনন্দ উল্লাস সারাদেশের ন্যায় উখিয়ায়ও চলছে। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ছিল রাজপথ।

আনন্দ ছাড়াও উখিয়া উপজেলায় নানান ঘটনা ঘটেছে এই কয়েকদিনে। গতদিনগুলোতে মানুষ আনন্দ ও বিজয় মিছিলের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন উত্তেজিত জনতা। সরকারের পতনের পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩০টি দোকান ভাঙচুর, লুটপাট ও তালাবদ্ধ করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়েছে অন্তত ১০টি বাড়িতে। পোড়ানো হয়েছে গাড়িও। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও সাংগঠনিক কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। উখিয়া সদর এলাকায় অনেকটা পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষেরও সৃষ্টি হয়।

আবার অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে সংখ্যালঘুদের জন্য। এই অস্থির পরিস্থিতিতে হামলার আশঙ্কা সৃষ্টি হয় উপজেলার বড়ুয়া হিন্দুদের মনের মধ্যে। এর প্রেক্ষিতে উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে, বিহারে রাত জেগে পাহারা দিতে দেখা গেছে স্থানীয় বড়ুয়া-মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনদের সম্মিলিতভাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ উখিয়া শাখার সভাপতি মেধু বড়ুয়া বলেন- সবাই সম্মিলিতভাবে যথাপ্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় কোন বৌদ্ধ বিহারে এখনো পর্যন্ত হামলা হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার, রাস্তা, দোকান সহ নানা স্থান পরিস্কার করতে দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নাই। সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছিল। তাই আমরা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করছি। আমাদের দেশ সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। সকাল থেকেই এখানে দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি উখিয়া উপজেলাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সবসময় শিক্ষার্থীরা নিয়োজিত থাকবেন বলে জানায়।

এছাড়াও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা এলেও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

এদিকে বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতির প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কার্যক্রম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর তৎপরতা। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোতায়েন রয়েছে সেনাসদস্যরা।

সেনাবাহিনীর উখিয়া সমন্বয়কারী সেলের প্রধান কর্মকর্তার (টাস্ক গ্রুপ কমান্ডার) দায়িত্ব পালন করছেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আশফাকুর রহমান (এসজিপি, পিএসসি)।

সেলটির অফিসার ইন চার্জের দায়িত্বে আছেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মঈনুল হাসান অনিক, যিনি ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে উখিয়ার ১১ টি ক্যাম্প যথাক্রমে- কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ১ ইস্ট ও ওয়েস্ট, ২ ইস্ট ও ওয়েস্ট, ৩,৪, ৪ এক্সটেনশন, ৫, ৬,৭, নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় সমন্বয় করবেন।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনা সদস্যরা নিয়োজিত আছেন এবং চেকপোস্ট ও ক্যাম্পগুলোর আশেপাশে টহল জোড়ালো রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা জনিত যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী।