সাবেক বিচারপতি খায়রুলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন
- ঢাবি প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩৩ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৪ PM
বিচারক হিসেবে দুর্নীতিমূলক ও বিদ্বেষমূলকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনী রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরীর জন্য দণ্ড বিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খাইরুল হকের বিরুদ্ধে শাহাবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম এই মামলার আবেদন করেন। রবিবার (১৮ আগষ্ট) সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার এসআই মাইনুল মামলার আবেদনটি গ্রহণ করেন।
মামলার আবেদনে মোজাহিদুল উল্লেখ করেন, বিচারপতি খায়রুল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় প্রভাবিত হয়ে এবং তার অবসর পরবর্তী ভাল পদায়নের জন্য লোভের বশবর্তী হয়ে দূর্নীতিমূলকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করার অভিপ্রায়ে ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরিবর্তন করে বেআইনীভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উক্ত আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, আসামীর বেআইনী রায়ের দরুন সারা দেশের জনগণের/ভোটারদের অধিকার হরণ করা হয়েছে এবং উক্ত অবৈধ রায়ের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরপর তিনবার অবৈধভাবে সরকার গঠন করার সুযোগ পায় এবং দেশে অরাজকতা কায়েম করে বিধায় সচেতন নাগরিক হিসেবে অন্যান্যদের সাথে অত্র অভিযোগকারীও একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে অত্র মামলার শুনানী ও রায় প্রদান করা হয়েছে যা আপনার থানা অধিক্ষেত্রের আওতাধীন।
মামলার আবেদনে আইনজীবী মোজাহিদুল বলেন, আসামী ( খায়রুল হক) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আব্দুল মান্নান খান কর্তৃক দায়েরকৃত সিভিল আপিল নং- ৫৯৬/২০০৫ ও সিভিল পিটিশন নং-৫৯৬/২০০৫ মামলায় বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী (অ্যাক্ট নং-১/১৯৯৬) বাতিল পূর্বক বিগত ১০/০৫/২০১১ইং তারিখে একটি সংক্ষিপ্ত রায়/আদেশ প্রদান করেন। ওই সংক্ষিপ্ত রায়ে আসামী পরবর্তী দশম ও এগারোতম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর আলোকে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মত প্রদান করেন।
উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। খাইরুল হক এর সাথে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মোহা. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মত প্রদান করলেও বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া,বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি ইমান আলী আসামীর রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, অর্থাৎ সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন।
অতপর ১০/০৫/২০১১ইং তারিখের উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশের প্রায় ১৬ মাস পরে অর্থাৎ ১৬/০৯/২০১২ইং খাইরুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে, দূর্নীতিমূলক ও বিদ্ধেষাত্মকভাবে উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশ উপেক্ষা করে উক্ত আপিল মামলার পূর্নাঙ্গ রায় লিখেন এবং বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গণ উক্ত দূর্নীতিমূলক ও বিদ্ধেষাত্মকভাবে পূর্নাঙ্গ রায়ের সাথে সম্মত হয়ে পূর্নাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর প্রদান পূর্বক রায়টি প্রকাশ করেন। যেহেতু আপিল বিভাগের উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশে উল্লিখিত পরবর্তী দশম ও এগারতম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর আলোকে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে দেয়া মত পরিবর্তন করে পূর্নাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করেন, সেহেতু উক্ত পূর্ণাঙ্গ রায়টি বেআইনী ও আইন বহির্ভূত। ১৬/০৯/২০১২ইং তারিখে প্রকাশিত পূর্নাঙ্গ রায়ের উক্ত পরিবর্তনের বিষয়টি বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া তার লিখিত রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন।
আওয়ামীলীগ ও অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত ১৫ সদস্যের সংবিধান সংশোধনী কমিটি ৩০/০৫/২০১১ইং তারিখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মত প্রদান করলে উক্ত সংবিধান সংশোধন কমিটি ২০/০৬/২০১১ইং তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের সুপারিশ করেন।
মোজাহিদুল বলেন, যেহেতু খাইরুল হক লোভের বশবর্তী হইয়া দুর্নীতিমূলক ও বিদ্বেষাত্মক ১০/০৫/২০১১ইং তারিখে সংক্ষিপ্ত রায় পরিবর্তন করে ১৬/০৯/২০১২ইং তারিখে বেআইনীভাবে পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করে দন্ডবিধির ২১৯নং ধারায় উল্লেখিত অপরাধ সংঘঠন করিয়াছেন। খায়রুল হক এহেন বেআইনী রায়ের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় এবং রায় পরবর্তীতে দেশে পাতানো ও একতরফা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ভোট কারচুপি করে শেখ হাসিনাকে পরপর তিনবার বেআইনীভাবে সরকার গঠন করার সুযোগ করে দেয়। অতঃপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ০৫/০৮/২০২৪ইং তারিখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পলায়ন করে। খায়রুল হক সর্বোচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে লোভের বশবর্তী হইয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একতরফা নির্বাচনে সহযোগিতা করে। যে কারনে বেআইনীভাবে খায়রুল হকের অবসরের পরে পুরস্কার স্বরূপ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করেন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে আসামীও পদত্যাগ করেন।
১০/০৫/২০১১ইং তারিখের সংক্ষিপ্ত আদেশে বিধি মোতাবেক তৎকালীন আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি স্বাক্ষর করেন কিন্তু খায়রুল হক তার অবসরের পরে উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশের মৌলিক/গুরুত্বপূর্ণ অংশ বেআইনীভাবে, অসৎ উদ্দেশ্যে এবং প্রতারণামূলকভাবে পরিবর্তন করে পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত আদেশের মৌলিক অংশ পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রতিফলিত হয়নি এবং রায় পরিবর্তনের শামিল। যা আইনত জাল বা অসত্য ডকুমেন্ট প্রস্তুতের জন্য দন্ডবিধির ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উল্লেখ্য যে, কোন অধিকতর বা পরবর্তী শুনানী ব্যতীত রায় পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়।