বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে ব্রিজে লুটিয়ে পড়ে আফনান, আর ওঠেনি

আফনান
  © সংগৃহীত

প্রাইভেট পড়তে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চলে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে। এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠেনি আফনানের। হঠাৎ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়। একপর্যায়ে গুলি চালানো হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। এক সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে আফনান গুলিবিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে মাদাম ব্রিজের ওপর। এরপর আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি আফনান। সবার চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় আফনান। এমন মৃত্যু মানতে পারছে না তার সহপাঠী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। আফনানের শোকে মায়ের আর্তনাদ যেন থামছে না। 

নিহত আফনান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাস টার্মিনাল এলাকার সালেহ আহম্মদ ও নাছিমা আক্তারের ছেলে। সে লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে  এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। 

সাদ আল আফনান হত্যায় সদ্য অপসারণ করা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান করে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৪ আগস্ট রাতে আফনানের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের পধদারী নেতাদের নামও রয়েছে। 

মামলার আসামিরা আত্মগোপনে থেকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ভয়ে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আফনানের বিধবা মা নাছিমা। 

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে কথা হয় আফনানের মা নাছিমা আক্তারের সাথে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘৩ মাস আগে স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা গেছে। সেই শোক সইতে না সইতে ছেলেকে হারালাম। সন্ত্রাসীরা আমার মেধাবী ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। মামলা করেছি এখন বিভিন্ন মোবাইল ফোন নাম্বার থেকে আমাকে ও আত্মীয়–স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এমন পরিস্থিতিতে কার কাছে যাব আমরা।’ 

ছেলের জন্য সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি জানান তিনি। তাদের আর দেখার কেউ নেই বলে অচেতন হয়ে পড়েন নাছিমা।

আফনানের বোন জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘আদরের ভাইটিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। ৩ মাসের ব্যবধানে বাবা ও ভাইকে হারিয়েছি। স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে আফনানের সাইকেলটি।’

তবে সরকারের কাছে ভাই হত্যার কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি।

সেদিনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আফনানের সহপাঠীরা জানায়, প্রাইভেট পড়তে গিয়ে কলেজের ব্যাগ কাঁধে নিয়েই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যায় আফনান।
তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট