ধারণার চেয়ে ভয়াবহ ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি; জরুরি ফোন নম্বর
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৭ PM , আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৭ PM
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী। ৩৬ বছরের মধ্যে এবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে জেলাটি। এখন পর্যন্ত প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সাহায্য কঠিন করে তুলেছে সেখানকার মানুষের পরিস্থিতি।
জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। উপজেলাগুলোর পৌর শহরগুলোও এখন পানির নিচে।
বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সহযোগিতার জন্য পৌঁছেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছাসেবীরাও সেখানে যাচ্ছেন।
তবে, স্থানীয়দের দাবি, যে পরিমাণ সহযোগিতা প্রয়োজন, সে তুলনায় খুব কমই এখন পর্যন্ত সেখানে পৌঁছেছে। সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দ্রুত স্পীডবোট ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের আবেদন তাদের।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে উপদ্রুত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে অনেকের মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে বেশ কিছু মোবাইল টাওয়ার বিকল্প উপায়ে চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় নেটওয়ার্কেও সমস্যা হচ্ছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার ও পানির প্রচণ্ড সংকট তৈরি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা।
ইতোমধ্যে গতকাল বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আজ আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
ফেনীর অধিকাংশ বাড়িতে ঢুকেছে পানি, একটি বড় অংশ এখন পানির নিচে। ফেনী রেল স্টেশনের পাশে কদলগাজী সড়কের চারতলা একটি বাড়ির বাসিন্দা আজ সকাল ৯টার দিকে জানান, তাদের বাড়িটির নিচতলা পুরো ডুবে গেছে। তারা ভয়ে আছেন, দ্বিতীয় তলাতেও পানি কখন যেন চলে আসে।
তবে কোথাও কোথাও পানি দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত উঠে গেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বাড়ি ডুবে যাওয়ায় লস্করহাটের তেতৌয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে আশেপাশের অনেকগুলো পরিবার।
ফেনী সদরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী এনাম হোসেন বাবু বলেন, 'আমার স্ত্রী ও সন্তান ছিল ফুলগাজীর মুন্সিরহাটে, আমার শ্বশুরবাড়িতে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে রওনা দিয়ে দুপুর ৩টায় সেখানে পৌঁছাতে পারি। বাড়িতে মোট ১৪ জন ছিলেন। নয়জনকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যাই। তারপর পানি এত বেড়ে গেছে যে আর ওই বাড়ির দিকে যেতে পারিনি। বাড়িতে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পাঁচজন ছিলেন। তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছি না। প্রচণ্ড ভয় লাগছে।'
বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্কের সর্বশেষ অবস্থা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'বন্যাদুর্গত এলাকার ১৩ শতাংশ সাইট ডাউন আছে। কয়েকটি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ড্যামেজ হওয়ার কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে কয়েকটি জায়গায়, সেখানে জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে৷ নেটওয়ার্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন হলে ১০টি ভিএসএটি প্রস্তুত আছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।'
পানি উন্নয়নের বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, 'আজকে বিপৎসীমার উপরে মোট ১৪টি স্টেশন আছে, সাতটি নদীতে। ৫২টির পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ৫৮টিতে কমেছে। বন্যাকবলিত জেলা পাঁচটি—মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম। বন্যাকবলিত নদী হচ্ছে কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, গোমতী, ফেনী, হালদা।'
তিনি বলেন, 'ফেনীর রামগর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি রয়েছে বিপৎসীমার ২১৮ সেন্টিমিটার উপরে। ফেনীর পরশুরামের সঙ্গে আমাদেরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।'
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, 'ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের পাশাপাশি আজ সকাল থেকে সদর উপজেলাতেও বন্যার পানি ঢুকে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রথম লক্ষ্য উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা।'
তিনি বলেন, 'জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলাগুলোতে পানি উঠে গেছে, উপরের তলাগুলোতে উদ্ধারকৃতদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।'
'সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্ধার কাছে আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুরি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, শুকনো খাবারসহ সম্ভাব্য সব সহযোগিতার চেষ্টা আমরা করছি,' যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ফেনীর চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জরুরি যোগাযোগের জন্য ফেনীর এনডিসি, সেনা ও নৌবাহিনীর ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব ফোন নম্বর দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়েছে, ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রয়োজনে ফেনীর এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ (+8801713187304), সেনাবাহিনীর মেজর ফাহিম (+8801769333192) ও নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুলের (+8801769754103) সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।