বন্যায় ভাসছে দেশের ১৩ জেলা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৪ AM , আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৪ AM
ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়া, উজানের পানি ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১৩টি জেলা। এতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত ৪ জেলায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে ৯ নদীর পানি।
আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত সব মিলিয়ে এখন দেশের ১৩টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জেলা হলো ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি ও সিলেট।
এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর মানুষ। ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞাসহ প্রায় সব উপজেলার সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ত্তর শ্রীপুর গ্রামের চৌধুরীবাড়ী এলাকার অনেক বাড়িতে কোমর সমান পানি। পাশের কিছু এলাকার বাড়িঘর একতলা ডুবে গেছে।
বাসিন্দারা টিনের চালের উপরে কিংবা আশপাশের পাকা ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। কোনো এলাকায় আবার একতলা ডুবে যাওয়ায় দোতলা বা তার উপরে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের একাধিক এলাকা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ’ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া, পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করতে গিয়ে দুজন আহত হয়েছেন।
প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর।
কুমিল্লার কিছু এলাকার মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিলেও নদীপাড়ের অনেক মানুষ বাড়ি ছেড়ে যাননি। এখন আকস্মিক বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। তাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। বাচ্চা শিশু থেকে শুরু করে কাঁদছে বয়স্করাও। অতিরিক্ত স্রোতে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামের রেখামারী খালের গোড়ার দিকের ওই বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
প্লাবিত গ্রামগুলো হলো- কালীনগর, দারুল মল্লিক, গোপী পাগলা, তেলিখালী, সৈয়দখালী, খেজুরতলা, সেনের বেড়, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ী, বাগীরদানা, দুর্গাপুর, হরিণখোলা ও নোয়াই।
জানা গেছে, পাইকগাছার কালীনগর গ্রামের পাশেই আছে ভদ্রা নদী। এদিন দুপুরের দিকে সেখানে পাউবোর ২২ নম্বর পোল্ডারের উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধের প্রায় ৯০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে যায়। এ সময় ওই পোল্ডারের ভেতরে থাকা ১৩টি গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ শুরু করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ঝালকাঠির বিষখালী নদী বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনার বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে বিষখালীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সুরমা-মেঘনায় ৭১ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা-মেঘনায় ৮৭ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদর উপজেলার বিষখালী নদী ১১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলায় ১০ সেন্টিমিটার, উমেদপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার সমান্তরাল, ভোলা খেয়াঘাট তেঁতুলিয়া নদী ৩ সেন্টিমিটার ও বরগুনার আমতলী উপজেলা পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেনা সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘দেশের বন্যাকবলিত ১০ জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
এদিকে চলমান বন্যায় চার জেলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন, নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা শহরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪) এবং লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এ ছাড়া ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।