"রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গণহত্যা দিবস পালন" সমাবেশে পাঁচ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

রও

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকারের হত্যা, ধর্ষণ, আর বর্বরতার শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা। ঐ দিনটিকে রোহিঙ্গারা সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে কালো দিবস আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

এ উপলক্ষে রোববার (২৫ আগস্ট) ক্যাম্পে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে গণহত্যা দিবস পালন করেছে রোহিঙ্গারা। সকাল ১১ টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২ টার দিকে শেষ হয় সমাবেশটি।

এর আগে সকাল ৯ টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পের ফুটবল খেলার মাঠে রোহিঙ্গারা জড়ো হতে শুরু করে। তখন তারা "মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ করো, গণহত্যা বন্ধ করো" স্লোগানসহ আরো নানান স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এছাড়াও পোস্টার, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তুলে ধরে মিছিলে। সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। 

সমাবেশে পাঁচ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- "রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের সহিংসতা ও হামলা বন্ধ করা, আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বসবাসের সুযোগ তৈরি করা, জান্তা ও আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা করা।"

তখন রোহিঙ্গা নেতারা বলেন- ‘এই দিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। তাই দেশ ছেড়ে এই দেশে এসে থাকতে হচ্ছে। আমরা আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই। মিয়ানমার আমাদের দেশ। অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনাও করেন তারা।

রোহিঙ্গারা আরো বলছে- ২০১৭ সালের পর এ বছর মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা জাতি দ্বিতীয় গণহত্যার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে সে দেশের রাখাইন স্টেটে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর দ্বিতীয় দফা গণহত্যা চালাচ্ছে। এভাবেই রোহিঙ্গাদের পরিচয় মুছে দিতে চায় তারা।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ উল্লাহ। এ দেশে কোন সরকার এল বা গেল নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বক্তারা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিজয় রোহিঙ্গাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণার বিষয় বলেন তারা। বাংলাদেশের মত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামলে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির পতন হতে বাধ্য বলেও মনে করেন তারা। এছাড়াও বাংলাদেশে বন্যা আক্রান্ত ১০ লাখ মানুষের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজনও করেন রোহিঙ্গারা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিথং ও রাসেথং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। ওই দিনটিকে স্মরণে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা 'রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস' পালন করে আসছে।