অবৈধ স্থাপনা ও ময়লার ভাগাড়ে মৃতপ্রায় খাল, উদ্ধার করল সেচ্ছাসেবীরা

নোয়াখালী
গাবুয়া খাল (নোয়াখালী)  © টিবিএম

নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে জেলার ২২ লাখ মানুষকে। অসংখ্য প্রাণ হানিও ঘটেছে এই বন্যায়। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ধীর গতিতে কমছে পানি।  কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খালের উপর অবৈধ স্থাপনা তৈরি, অপরিকল্পিত ব্রীজ- কালভার্ট নির্মাণ এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা ফেলায় শতবছরের খালগুলো সংকুচিত হয়ে পরিনত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে পানি অপসারণের পথে তীব্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

অভিযোগ উঠে, দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালীরা ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গাবুয়া খালটি যত্রতত্র ব্যবহার করে মৃতপ্রায় করে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে এতোদিন কথা বলার সাহস কেউ পায় নি। নোয়াখালী খাল হয়ে যেখানে এ অঞ্চলের পানিগুলো এই খাল দিয়ে নেমে নেমে যেত লক্ষীপুর ওয়াপদা খালে। সে পানিগুলো এখন জমে আছে মানুষের বসতবাড়ি কিংবা রাস্তাঘাটে। পানি অপসারণ না হওয়ার বেগমগঞ্জ উপজেলার জীরতলি, রাজগঞ্জ ও ছয়ানীর প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। লোকালয় ছেড়ে মানুষ স্থান নিতে হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্রে। 

gavv

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছয়ানী ও রাজগঞ্জের বেশ কিছু এলাকার সড়কগুলো এখনো পানির নিছে তলিয়ে আছে। খাল-বিল তাদের নাব্যতা হারিয়েছে ফলে পানি দ্রুত নামছে না। সড়কগুলোও ভেঙে পড়েছে। পিচ ঢালাইয়ের রাস্তা গুলো টিকে আছে ইটের কণার উপর ভর করে। সড়কে যানবাহন এর যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চালকদের। এ যেন সীমাহীন দূর্ভোগ। 

এদিকে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন 'নয়নপুর ছাত্র ও যুব সমাজ' এর পক্ষ থেকে প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের অর্থায়নে ও প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন টিপুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছয়ানীর খালটি ধ্বংসস্তুপ থেকে রক্ষার কাজ শুরু করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান সহ সংস্থার অন্যান্যরা। ছয়ানী বাজারস্থ প্রায় ১ কিলোমিটার খাল পরিস্কার করায় পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।  যতদিন পর্যন্ত এই দূর্ভোগ না পোহাবে ততদিন পর্যন্ত খাল সংস্কারের কাজ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন সেচ্ছাসেবীরা। তারা বলেন, প্রশাসন যদি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে তাহলে এই সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত হবে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এসব উদ্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসব খাল সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যে যার মতো করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে কিন্তু প্রশাসন ছিল নির্বিকার। স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে অনতিবিলম্বে এসব খাল উদ্ধার অভিযান চালানো জরুরি বলে মনে করছেন তারা। 

এদিকে বাপাউবো বেগমগঞ্জ পওর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী  মো. সফিকুল ইসলাম বাবুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সেচ্ছাসেবীদের এমন কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জেলা বাপাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী আমির ফয়সাল জানান, আমরা খাল দখলের বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখে খাল গুলো উদ্ধারে অভিযান চালাবো এবং খাল পুন:সংস্কারে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো। এছাড়াও খাল সংস্কারে সেচ্ছাসেবীদের সব ধরনের সহায়তা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।