আর্থিক সহয়তা প্রদান অনুষ্ঠানে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত -১৫
- মো: মান্নান, পরশুরাম প্রতিনিধি:-
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ AM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২০ PM
-11353.jpg)
পরশুরামে বিএনপি'র ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি'র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর ব্যানারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে অর্থিক সহয়তা প্রদান অনুষ্ঠানে ছাত্রদল ও যুবদলের স্থানীয় নেতাদের না জানানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত।
বৃহস্পতিবার(১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রামে ছাত্রদল ও যুবদলের স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সুবার বাজারে দুই গ্রুপের মহড়া চলে। এসময় দৈনিক ভোরের কাগজের উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল মান্নান ভিডিও ও ছবি তোলার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন কেঁড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলার হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার(১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রামে পরশুরাম উপজেলা বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ বি এম দাউদ এর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবছার এর তত্বাবধানে বিএনপি'র ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর ব্যনারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তকে নগদ টাকা প্রদান অনুষ্ঠান চলাকালে উপজেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম সরকারের নেতৃত্বে ইউনিয়ন যুবদলের স্থানীয় আরেকটি গ্রুপ হামলা চালায়। এসময় তারা অনুষ্ঠান স্থলের চেয়ার ভাংচুর এবং মজনুর ব্যানার ছিঁড়ে সভাস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে ইউনিয়ন যুবদল ও ছাত্রদলের ৫ (ইমন,আইয়ুব, রাব্বি, শাহাদাত, লিমন)নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবছার। পরে সন্ধ্যায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুবার বাজারে দুই গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয় এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসময় সুবার বাজারে একাধিকবার দুই গ্রুপের মুখোমুখি সংঘর্ষে সেলিম সরকার গ্রুপের আরও ৯ নেতাকর্মী( শাহিন,দিদার,আবুল হাশেম, রণি আলামিন, মোবারক, রাজন,সোহেল) সহ অন্তত ১৫ জন আহত হয় বলে অভিযোগ ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো: শাহজালালের।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবছার জানান, আমরা মজনু ভাইয়ের ব্যানারে ওনার পক্ষে মধুগ্রামে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শান্তিপূর্ণভাবে নগদ অর্থ বিতরণ করছিলাম। এসময় উপজেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম সরকারের সমর্থিত একটি দল আমাদের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে হামলা চালায় এবং অনুষ্ঠান স্থলে চেয়ার ভাংচুর, মজনু ভাইয়ের ব্যানার ছিঁড়ে ও আমাদের দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে। পরে আমরা এই ঘটনা উপজেলা বিএনপি'র এবং ইউনিয়ন বিএনপিকে জানাই। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত মধুগ্রামে হলেও সন্ধ্যায় তারা আবার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে সুবার বাজারে অবস্থান করে এবং আমাদের ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীকে দাওয়া করে পরে আমাদের ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা মুখামুখি অবস্থান করলে তাদের সাথে সংঘর্ষ বাজে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে দলীয় অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে এমন হামলা চালায়। আমরা দলের উপজেলা এবং জেলা শীর্ষ নেতাদের এই ঘটনা জানিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবীও করেন এই নেতা।
অপরদিকে, উপজেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম সরকারের সমর্থিত গ্রুপের সদস্য ইউনিয়ন বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো:- শাহিন জানান, মধুগ্রামে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবছার একজন ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠান করছিলেন। এসময় ওই ছাত্রলীগ নেতাকে দেখে আমাদের ছেলেরা প্রতিবাদ করে তবে সেখানে তেমন কিছুই হয়নি। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আর্থিক সহয়তা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করে। তবে আমাদের সাথে যা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে দেখে তাদের সাথে বাকবিতন্ডায় হয়েছে কিন্তু তারা সেই ঘটনায় সুবার বাজারে পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলার প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের ছাত্রদলের প্রায় ১ডজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে। তারা ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে প্রোগ্রাম করছে কিন্তু ইউনিয়নের কিংবা ওয়ার্ডের কেউ সেই বিষয় জানে না তাই আমাদের ছাত্রদল ও যুবদলের কয়েকজন নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে বাকবিতন্ডায় জড়ায় কিন্তু তারা এভাবে বাজারে অতর্কিত হামলা করে আমাদের নেতাকর্মীকে আহত করার ঘটনায় আমরা ইতিমধ্যে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু তালেব সহ অন্যান্য উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পরশুরাম উপজেলা বিএনপি সদস্য ও মির্জানগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম সরকার বলেন, যাদেরকে আমার অনুসারী বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা এ হামলার ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত নয়। সেখানে মূলত ত্রাণ নিতে আসা লোকজন ত্রাণ না পেয়ে ঝামেলা করেছে। পরে আমার অনুসারীদের মধ্যে বাবুল মেম্বারের দুই ছেলে ও ভাতিজাকে বাজারে আসার পথে বহিরাগতরা এসে সাপের মতো পিটিয়েছে। এখানে আমার অনুসারী বলে হামলার যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়।
এ ব্যাপার পরশুরাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হালিম বলেন, ঘটনাটি অবগত হয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ কয়েকজনকে মীমাংসার করে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। এ ঘটনায় দুপক্ষের আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আমাদের লোকজন দেখতে গিয়েছিল। মূলত ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে একপক্ষকে না জানানোর কারণে মান-অভিমান থেকে এ ঘটনা ঘটেছে।
পরশুরাম মডেল থানার (ওসি) শাহাদাত হোসেন জানান, সুবার বাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের বিষয়ে জেনেছি তবে এই বিষয় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শুনেছি স্থানীয় বাজার কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঘটনার সমাধান হয়েছে।