ঘেরের মাছসহ গাছের সুপারি-নারকেলও লুটে নিচ্ছে বিএনপি সমর্থকরা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ PM , আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ PM
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশের মতোই দীর্ঘদিন দলটির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি বাগেরহাট থেকেও পালিয়েছেন তাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী। এ সুযোগে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাড়িঘর দখল করছেন সুবিধাবাদীরা। এতে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীও।
অনেক ক্ষেত্রে দলটির নাম ভাঙিয়েও চলছে দখল, লুটপাট। প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থক দখল করছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সহায়-সম্পদ। তুলে নেওয়া হচ্ছে ঘেরের মাছ, মূল্যবান জিনিসপত্রের সঙ্গে পেড়ে নেওয়া হচ্ছে গাছের সুপারি ও নারকেলও।
জানা গেছে, কচুয়ার কুমারগাড়িয়া চার কিলোমিটার খালটি দেড় দশক ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর দখলে ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পরপরই উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদুর রবের নেতৃত্বে মাছ চাষের জন্য খালটি দখল হয়েছে। তাঁর অনুসারীরা অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিশোধের কথা বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে মারধর, বাড়িঘর লুট, অগ্নিসংযোগ ও ঘের
কবজা করছেন।
হালের নিপীড়কদের একজন উপজেলার চন্দ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক সেনাসদস্য আবদুর রব। অভিযোগ আছে, অবসরের পর তিনি ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়ে নেন। এখন পদ না থাকলেও তাঁর সঙ্গে রয়েছে বর্তমান নেতাকর্মী। এর মধ্যে অন্যতম তাঁর ভাই ও স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কবির হোসেন এবং নিকটাত্মীয় রাঁড়িপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি আকবর শেখ। তারা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবদুর রব ও তাঁর অনুসারীরা ফতেপুর বাজারে মোস্তাইন নামে একজনকে তাঁর দোকান সরিয়ে দিয়েছেন। তারা একই বাজারে আওয়ামী লীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম শেখের স’মিল ও পাঁচটি দোকান দখল করেছেন।
জাহিদুল বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করতাম সত্য; কিন্তু কাউকে অত্যাচার করিনি। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা হচ্ছে। আমি ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছি না। এলাকায় ঢুকলে নাকি মেরে ফেলবে।’
চন্দ্রপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী ইলিয়াস পাইক ও এখলাস পাইকের ওপর হামলা এবং কোপানো হয়েছে। ইলিয়াসের বাড়ি লুট করা হয়েছে। তারা এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিবপুর গ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ারের ঘের লুট হয়েছে। চন্দ্রপাড়া গ্রামের সলেমান পাইকের বাড়ি লুট এবং তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নীরব চাঁদাবাজি চলছে। ব্যবসায়ী রুহুল আমিন খানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে আবদুর রবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী রুহুল বলেন, ‘আমার পুকুরের মাছ তুলে নিয়েছে। গাছের সুপারি ও নারকেল– সব পেড়ে নিয়ে গেছে তারা। মামলা করায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এতে তাদের নাকি কিছুই হবে না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও দখলের উৎসব। এসব নিয়ে দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়ছেন বিএনপি নেতাকর্মী। রাড়িপাড়ার সুশান্ত পাইক নামে আওয়ামী লীগ কর্মীর কাছে সোয়া লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন আবদুর রব ও তাঁর লোকজন। চাঁদা না দিলে তাঁকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সুশান্ত পাইক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। এত টাকা পাব কোথায় বলায় আমাকে মারধর করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা না দিলে এলাকাছাড়া করাসহ ২০-২৫টি মামলার আসামি করারও হুমকি দিয়েছে তারা।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সাবেক নেতা আবদুর রব বলেন, ‘পনেরো বছর ধরে বাড়িছাড়া। মা-ভাই মারা গেলে জানাজায়ও অংশ নিতে পারিনি। ২০১৪ সালে আমাকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিল। এত কিছুর পরও আমরা কাউকে কিছু বলিনি। বরং অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করছি। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচন করব। এ কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন চক্রান্ত করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
লুটপাট ও দখলের অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা কবীর হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি তাঁর এলাকায় ঘুরে আসতে বলেন এবং লাইন কেটে দেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকরাম হোসেন তালিম বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে আবদুর রবসহ যাদের দলীয় পরিচয় নেই, তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে প্রশাসন। কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করলে সেটাও দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। কোনো অপরাধীর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।
এদিকে কচুয়ার আলীপুর গ্রামে দখল-লুটপাটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে গত ১০ সেপ্টেম্বর হামলার শিকার হন তিন সংবাদকর্মী। এ ঘটনায় কচুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত সাংবাদিকরা। উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য রাসেল শেখের নেতৃতে এক দল লুটেরা দখল ও লুটপাট চালাচ্ছে বলে খবর পেয়ে সেখানে গেলে তারা পুলিশের সামনেই হামলা করে। এ সময় মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
কচুয়া থানার ওসি মহসীন হোসেন বলেন, যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। মামলা ও অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হলেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।