ফ্যাসিস্ট আ'লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহায় পায় নাই: ডাঃ শফিকুর রহমান

সিরাজগঞ্জ
ডাঃ শফিকুর রহমান এর বক্তৃতাআর চিত্র  © টিবিএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহায় পায় নাই। ভিক্ষুরা সারাদিন ভিক্ষা করেছে বিকেল বেলা আওয়ামী লীগ ক্যাডারোর ভিক্ষুকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে। এরপর ভিক্ষুকরা চড়ামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে জীবন যাপনে তাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ছিল।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিরাজগঞ্জে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

২০২৪-এর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বীর ছাত্র জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করে প্রথমেই জামায়াত আমির বলেন, পাকিস্তানিরা আমাদের সাথে বৈষম্য করেছিল তাই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে সেই আগের ধাচেই চলতে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ জাতির রক্ত চোষার মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করেছি।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যে দলের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করেছে তার নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম। প্রমাণ ছাড়াই মিথ্যা অজুহাতে একে একে শীর্ষ দায়িত্বলীল নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। ফাঁসি দেয়া হয়েছে, জেলের ভেতরে তিলে তিলে তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। চেয়েছিল তারা প্রাণ ভিক্ষা চাক, কিন্তু তারা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথানত করেননি।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহীনুর আলমের সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় জামায়াত ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রিয় মজলিসে শূরা সদস্য ও পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, কেন্দ্রিীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. মো: হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর ড. মাওলানা আব্দুস সামাদকেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও বায়তুল মাল সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মো: শাহাবুদ্দিন, সিরাজগঞ্জ জেলা জামাযোতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আলী আলম ও মাওলানা আব্দুস সালাম এ সময় জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অন্যারের প্রতিবাদ যারাই করেছেন তাদের ওপরেই অকথ্য নির্যাতন নেমে এসেছে। তবু আমরা পালাই নাই। আমরা এদেশকে ভালবাসি, আমরা এদেশকে আঁকড়ে ধরে আছি, থাকবো। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারী হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। বিদায় নিতে হয়েছে স্বৈরশাসকের। দাদের দলের পাতি নেতারা পর্যন্ত পালাতে ব্যস্ত আছেন।

আমিরে জামায়াত বলেন, শেখ হাসিনা বলতেন বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে, তাহলে এখন একটু আসুন আপনার স্বাধীন বিচার বিভাগ দিয়েই আপনার বিচার করা হবে। দেখি কেমন বিচার হয়। আপনার বিচারে প্রমাণ ছাড়া বিচার করা হবে না বা আপনা বিচারে কোনো অন্যায় করা হবে না। আপনি আসুন, বিচারের মুখোমুখি হন। দেখি আপনার কত সাহস।

তিনি বলেন, আমাদের ডায়নামিক নেতা মীর কাশেম আলীকে ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি ফঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলেছিলেন আমি কোনো অন্যায় করিনি বরং দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা বলতেন তার সময় নাকি গণমাধ্যম স্বাধীন ছিল। অথচ তারা সেসময সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারতেন না, সঠিক কথা লিখলে জুলুম নেমে আসতো।

তিনি বলেন, বর্তমানে সময় এসেছে, মিডিয়াকে বিবেক দিয়ে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা বলতেন দেশ নাকি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছিলেন, কিন্তু কীসের বিনিময়ে, জনগণের রক্তের বিনিময়ে, জনগণের রক্ত চুষে নেয়ার বিনিময়ে। উন্নয়নের নামে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার করেছেন। কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া বিনিময়ে, সকল দলকে কোণঠাসা করে দিয়ে আবারো একদলীয় বাকশাল কায়েম কায়েম করেছিল। এর কারণে জনগণের মনে ক্ষোভ, যন্ত্রণা, কষ্ট সেই ২০০৯ সাল থেকে পঞ্জিভূত ছিল।

আমিরে জামায়াত বলেন, জামায়াতকে কেউ কিনতে পারেনি। কারণ জামায়াতের লোকেরা আল্লাহর কাছে বিক্রি হয়েছে। কারো কাছে বিক্রি প্রশ্নই ওঠে না। আমিরে জামায়াত রুকনদের উদ্দেশ্যে বলেন এখন সুযোগ এসেছে, ১৫ বছরের কাজ পাঁচ বছরে করতে হবে। সে লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে ঝাপিয়ে পড়তে হবে দ্বীনের দ্বায়ী হয়ে। দ্বীনকে এদেশে প্রতিষ্ঠা করে আমরা ঘরে ফিরে যাব ইনশাল্লাহ।

এরপর বিকেলে একই মাঠ ও মঞ্চে কর্মী ও সূধী সমাববেশ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মী ও সূধী সমাবেশে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ জাতির প্রতি দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখেন।