গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

পিটিয়ে
  © সংগৃহীত

কয়েকজন যুবক গোল হয়ে গাইছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান 'মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা'। কেউ মুখ দিয়ে বাজাচ্ছেন বাঁশি, কেউ করছেন উল্লাস। ঠিক তাদের মাঝখানেই নিল রঙের গেঞ্জি এবং জিন্স প্যান্ট পড়া এক যুবক ঢুলছেন। যার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সাথে। গান গেয়ে গেয়েই পিটিয়ে নৃশংস ও নির্মমভাবে ওই যুবককে হত্যা করা হয়। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভিডিওটি নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার। আর ওই যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। যার লাশ গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে রাস্তা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। 

খুনের শিকার শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া  ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তিনি নগরের কোতোয়ালী থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে স্ত্রী শারমিন আক্তারের সাথে থাকতেন। 

লাশ উদ্ধারের পরপরই গত ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তখনও কেউই জানতেন না শাহাদাতকে এভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে। 

মামলার এজাহারে শাহাদাতের চাচা উল্লেখ করেন, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের পাওয়া গেছে। 

এ বিষয়ে নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, 'গত ১৪ আগস্ট প্রবর্তক এলাকা থেকে শাহাদাত নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার চাচা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড় যেখানে দেখা যায়, শাহাদাতকে স্টিলের পাইপের সাথে বেঁধে কিছু যুবক গান গেয়ে গেয়ে পেটাচ্ছে।'

যারা শাহাদাতকে হত্যার সাথে জড়িত তাদের খুব দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই ঘটনা আসলে মানা যায় না, খুবই কষ্টকর। আমরা খুব দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করব, ইনশাআল্লাহ। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।'

এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে 'মানসিক ভারসাম্যহীন' এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল শিক্ষার্থী। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ মামুন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরের এ ঘটনার জের ধরে গতকাল দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারও আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।