টাকা দিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা পোস্ট; ব্যবসায়ীকে গণপিটুনির পরিকল্পনা!

ব্যবসায়ী
  © সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে কেন্দ্র করে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা একটি চক্র । বলা হয়, ওই ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের বড় নেতা। তিনি জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন। এলাকার নেতা-কর্মীদের নিয়ে আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

১৪ আগস্ট আসিফ নেওয়াজ নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রচার করা হয় যে বাড্ডার ২৫/৩, প্রগতি সরণীর আল কাদেরিয়া রেস্টুরেন্টের মালিক ফিরোজ আলম সুমন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন। ফেসবুকে এরকম ৪/৫ টি পোষ্ট করার পরদিন ১৫ আগস্ট বাড্ডা এলাকার একদল শিক্ষার্থী ওই রেস্টুরেন্টে যায়। তারা মালিককে খুঁজতে থাকে। রেস্টুরেন্টের মালিক ফিরোজ আলম সুমন হতবাক হয়ে যান। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরেন। বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা নাই। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য ও ট্যুরিজম বিভাগের কো-চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব। এরপর শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে আসিফ নেওয়াজের দেয়া স্ট্যাটাস  ফিরোজ আলমকে দেখান। পরে ফিরোজ আলম বিষয়টি নিয়ে বাড্ডা থানায় সাইবার অপরাধের অভিযোগে একটি জিডি করেন। 

পুলিশ জিডি তদন্ত করে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসিফ নেওয়াজকে আটক করে। আসিফ নেওয়াজ পুলিশকে জানায় যে জনৈক ইফতেখার আমিন নামে এক ব্যক্তি আল কাদেরিয়া রেস্টুরেন্টের কর্ণধার ফিরোজ আলম সুমন সম্পর্কে কিছু তথ্য ও ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে বলে। এর উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক হেনস্থা, ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং গণপিটুনির মাধ্যমে জীবননাশের পরিকল্পনা। 

বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করেছি। ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর পেছনে ওই ব্যবসায়ীর আপন দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাদেরকে আমরা আটকের চেষ্টা করছি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আল কাদেরিয়া রেস্টুরেন্টের মালিক ফিরোজ আলম সুমন। মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্নস্থানে এদের রেস্টুরেন্টের ব্যবসা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেখাশুনা করতেন তার ছোট দুই ভাই ইফতিখারুল আমিন ও হাসনাইন আমিন। তারা বিভিন্ন সময় বাড্ডার রেস্টুরেন্ট থেকে দিনে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে সরিয়ে ফেলতেন। এতে কয়েকমাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ফিরোজ শনাক্ত করেন যে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশবাক্সে টাকা না রেখে তার দুই ভাই নিজেদের পকেটে রাখতেন। এ নিয়ে ফিরোজের সঙ্গে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আসিফ  নেওয়াজ নামের এক ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে ফিরোজ আলম সুমনের কয়েকটি ছবি দিয়ে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য লিখে পোষ্ট দেয়। 

ঘটনার শিকার ফিরোজ আলম সুমন বলেন, আসিফ নামের ওই যুবককে টাকা দিয়ে ভাড়া করে আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোষ্ট দিতে বলেছে। পোষ্ট দেখে উত্তেজিত হয়ে লোকজন আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। এরকম পরিকল্পনা থেকে আমি বেঁচে গেছি। 

পোষ্ট দাতা আসিফ নেওয়াজ বলেন, ইফতিখারুলের উদ্দেশ্য ছিল এই পোষ্টের মাধ্যমে লোকজন উত্তেজিত হয়ে সুমনের ওপর হামলা করবে। আমাকে সে বলেওনি যে সুমন তার ভাই হয়। ঘটনাটি বুঝতে পেরে আমি ১৮ আগস্ট বাড্ডা থানায় ইফতিখারুল আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। 

এ বিষয়ে ইফতিখারুল ও হাসনাইন আমিনের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলে তারা রিসিভ করেনি। এমনকি ম্যাসেজ পাঠিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।