বাসায় সাজানো বইখাতা, শুধু ফিরবে না রাতুল
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ AM , আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ AM
বাড়িতে সাজানো আছে ব্যবহার্য জিনিসপত্র। বিছানা-বালিশ, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বইপত্র, খেলার সামগ্রী, জুতা-স্যান্ডেল সবকিছুই সাজানো। তবে, এগুলোর ব্যবহারকারী জুনাইদ ইসলাম রাতুল(১৫) আর ফিরবে না। বগুড়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাতুল। ৪৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার সকালে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে মারা যায়। নিহতের বাবা জিয়াউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বগুড়ায় বিজয় মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে রাতুল পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়।
রাতুল বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, ঘোনপাড়ার মুদি দোকানি জিয়াউর রহমানের ছেলে। সে নিশিন্দারা উপশহরের পথ পাবলিক স্কুল ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বগুড়ায় বিজয় মিছিল বের হয়। রাতুল বড় বোন কলেজছাত্রী জেরিন ও ভগিনীপতি আমির হামজার সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। মিছিল শহরের ঝাউতলা এলাকায় পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা সদর থানায় হামলা চালায়।
এ সময় পুলিশ গুলি চালালে রাতুল গুরুতর আহত হয়। রাতুলের মাথায় চারটি ছররা গুলি লাগে। একটি গুলি বাম চোখের মধ্য দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছররা গুলিবিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় রাতুলকে প্রথমে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফার করেন।
ভর্তির পর তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা খুলির অংশ কেটে মগজ থেকে একটি গুলি বের করেন। এক্সরে রিপোর্টে রাতুলের মাথা, চোখসহ শরীরে শতাধিক গুলি পেয়েছেন চিকিৎসকরা। ৩৬টি গুলি অপসারণ করেছেন তারা। এরপর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কয়েকদিন আগে রাতুলকে ওয়ার্ডের বেডে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, রাতুল বেঁচে গেলেও দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে।
রাতুলের বাবা জিয়াউর রহমান জানান, গত কয়েকদিন তার ছেলের অবস্থা ভালো ছিল। কথা বলেছে, খাওয়াদাওয়া করেছে। রোববার রাত ৪টার দিকে হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি ঘটে। সোমবার সকাল ৬টার দিকে মারা যায় সে। জিয়াউর রহমান জানান, রাতুলের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না।
তিনি আরও জানান, সোমবার বাদ জোহর ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাতুলের প্রথম জানাজার পর মরদেহ বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, ঘোনপাড়ার বাড়িতে আনা হবে। দ্বিতীয় জানাজা শেষে নামাজগড় আঞ্জুমান ই গোরস্তানে তাকে দাফন করা হবে। এদিকে সোমবার সকালে রাতুলের মৃত্যুর খবর এলে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে তার পরিবার। স্বজনরা আহাজারি করতে থাকেন। পুরো এলাকায় মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।