কর্মহীনের জীবিকা
চলনবিলে শামুক কুড়িয়ে সংসার চলে যাদের
- মোঃ রবিউল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ PM , আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ PM
চলনবিল নাম শুনলেই গা ছমছম করে। থইথই জলে উথালপাথাল ঢেউয়ের কথা ভেবে। তবে চলনবিলের এ রূপ বর্ষার। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয় চলনবিল। বর্তমানে এ বিলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে জন্ম নেওয়া শামুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন নিম্ন আয়ের হাজারও মানুষ। বিলাঞ্চলে তেমন কাজ না থাকায় কর্মহীন এসব মানুষ এ উপায়ে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
জানা যায়, চলনবিলের ১৬টি নদী, ৩৯টি বিল ও ২২টি খাড়িসহ বিভিন্ন জলাভূমি থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মেট্রিক টন শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। এসব জলাভূমি থেকে একজন নিম্ন আয়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা গড়ে প্রতিদিন দুই বস্তা শামুক কুড়ায়। যা বেচাকেনার জন্য পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাংগুরা, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় ৫০টিরও বেশি আড়ৎ গড়ে উঠেছে।
শামুক সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে আড়তদাররা প্রতি বস্তা ৪০০-৫০০ টাকা দরে কিনে নেন। এসব শামুক কিনে ট্রাকে রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের ঘেরের মালিকদের কাছে প্রতি বস্তা ৭০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। সারাদিনের কুড়ানো শামুক বিকেলে বিভিন্ন স্থানে জড়ো করেন। এরপর ব্যবসায়ীর (ক্রেতা) কাছে বিক্রি করেন। প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চালান। শামুক সংগ্রহের কাজ চলে বছরের আষাঢ়-কার্তিক মাস পর্যন্ত।
শামুক সংগ্রহকারী অনেকেই জানান, এ বছর জলাশয়গুলোতে নামলে শরীর চুলকাচ্ছে। তারপরও জীবিকার প্রয়োজনে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন এ কাজ করতে।
তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের মাকড়শোন এলাকায় গড়ে ওঠা শামুকের ভাসমান হাটে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত অন্য হাটের মতোই পাইকারি দরে শামুক বেচাকেনা হচ্ছে। রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে নৌকা আর সেখানে শতাধিক বস্তা শামুক। ফড়িয়া ও সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে বস্তা হিসেবে শামুক কিনে নিচ্ছেন আড়তদাররা।
এসব আড়তদারের কাছে শামুক বিক্রি করতে আসা উপজেলার সগুনা গ্রামের সজিব হোসেন বলেন, ‘এলাকার দরিদ্র ছেলেমেয়েরা শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে। তাদের কাছ থেকে কিনে এনে আমরা এখানে বিক্রি করি।’
কথা হয় তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল গ্রামের আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে চলনবিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এতেই জীবিকা নির্বাহ করা যেত। কিন্তু বর্তমানে বিলে পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে শামুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। প্রতিদিন গড়ে ২ বস্তা শামুক সংগ্রহ করতে পারি। এতে যা আয় হয়, তাই দিয়ে সংসার চালাই।’