তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসায় বিধিবহিঃভূত কিন্টারগার্ডেন মাদ্রাসা

রংপুর
  © টিবিএম

রংপুরের তারাগঞ্জে তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসায় প্রাথমিক সমমান (এবতেদায়ী) সরকারি শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখে “তারাগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা” নামে চলছে বাণিজ্যিক ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম। তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসাটিতে এবতেদায়ী থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। সকল শ্রেণি ও শাখার শিক্ষা ব্যবস্থা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত।

প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক সমমানের এবতেদায়ী শাখাটি গত ২০২০ সালে বন্ধ করে ব্যাক্তিগত ভাবে “তারাগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা” নামে প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৭টি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চালু করে। এমপিওভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি অবকাঠামো, সরকারি বেতন ভূক্ত এবতেদায়ী শাখার শিক্ষক ও দাখিল শাখার শিক্ষক মো. আব্দুর রহমান কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে বণিজ্যিক ভাবে গড়ে তোলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তথ্য মতে, দাখিল শাখার শিক্ষক মো. আব্দুর রহমান কর্তৃক বাণিজ্যিক স্বার্থে পরিচালিত “তারাগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা” প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৭টি শ্রেণিতে ২৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। প্লে থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি শ্রেণির প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন=৩৫০/- টাকা এবং ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৩টি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন= ৪৫০/- টাকা। ভর্তি ফি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর= ৫০০/- টাকা। পরীক্ষার ফি সহ অন্যান্য ফি নেওয়া হয় বলে অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় তারাগঞ্জ উপজেলায় সরকারি ভাবে ৭৫টি, বেসরকারি এবং এনজিও ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩৫টি-সহ মোট ১১০টি প্রাক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসার এবতেদায়ী শাখা বা “তারাগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা”দুটোর কোনটাই আমাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত নাই।

এবতেদায়ী শাখা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. আব্দুছ ছালাম বলেন, আমরা ২০২০ সালে একটি রেজুলেশন করে এবতেদায়ী শাখা বন্ধ করেছি ঠিকই কিন্তু বিকল্প হিসেবে “তারাগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা”চালু করেছি। রেজুলেশন করে সরকারি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ এবং সরকারি জমি, স্থাপনা, শিক্ষক কর্তৃক ব্যাক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভাবে কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা পরিচালনা করা কতটা সরকারি বিধিসম্মত জানাতে চাইলে তিনি বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য ও আক্রমণাত্বক কৌশলে হুমকী প্রদান করেন।

তারাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রেহেনা ইয়াসমিনের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটির এবতেদায়ী ও দাখিল শাখাটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপজেলা অফিসে লিখিত কোন দাপ্তরিক নির্দেশনা না থাকায় তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসার এবতেদায়ী(প্রাথমিক সমমান) ও দাখিল (এসএসসি সমমান) এই শাখা দু’টিতে “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর”এর উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তার এবতেদায়ী শাখার বই বিতরণ ছাড়া, নেই কোন সুনির্দিষ্ট দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতা প্রয়োগের দায়িত্ব।

তিনি আরো বলেন, এবতেদায়ী শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখে বাণিজ্যিক ভাবে “তারাগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন মাদরাসা” চালু করা সরকারি বিধিসম্মত ভাবে সঠিক হয়নি। বিষয়টি আমি জানতাম না, এখন জানলাম, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাবো।

তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসায় অবৈতনিক এবতেদায়ী সরকারি শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখে বেতনভূক্ত কিন্টারগার্ডেন চালুর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুবেল রানা বলেন, বিষয়টা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সভাপতি মহোদয়কে জানানো হবে।

উল্লেখ্য যে, যেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক ও সমমানের শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি প্রদানসহ বুনিয়াদি শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেখানে তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদরাসায় এবতেদায়ী(প্রাথমিক সমমান) শাখা বন্ধ রেখে সরকারি বেতনভূক্ত শিক্ষক দ্বারা প্রাচীর বেষ্টিত সরকারি অবকাঠামোর ভিতরে ব্যাক্তিগত বাণিজ্যিক স্বার্থে বেতন ও ভর্তি ফি সহ অন্যান্য ফি আদায়ের মাধ্যমে "তারাগঞ্জ কিন্টার গার্ডেন মাদরাসা" পরিচালনা করছে।