পুলিশের জালে ২ শিক্ষার্থীকে হত্যা চেষ্টার সেই শিক্ষক গ্রেফতার
- আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ PM , আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ PM
রংপুরের তারাগঞ্জে 'মদিনাতুল উলুম পঞ্চায়েতপাড়া কওমি মাদ্রাসা'র দুই শিশু শিক্ষার্থীকে জুসের সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা চেষ্টার চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামী উক্ত মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মোঃ দেলওয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ২০২৪ইং বিকেল সাড়ে ৪টায় নীলফামারী সদর উপজেলা শহরের একটি রাস্তা থেকে তাকে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তারাগঞ্জ থানার এস আই কনক রঞ্জন বর্মণ ও সঙ্গীয় এএসআই মোঃ রায়হান সরকারের সহযোগীতায় তাকে আটক করা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ইং বৃহস্পতিবার দুপুরে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউপি'র ডাঙ্গাপাড়ার 'মদিনাতুল উলুম পঞ্চায়েতপাড়া কওমি মাদ্রাসা' নিকস্থ একটি কবরস্থানে খনন করা একটি গোপন কুয়ায় ইমরান ও ইয়ামিনকে কৌশলে নিয়ে গিয়ে বিষ মেশানো জুস খাওয়ায় সেই মাদ্রাসা শিক্ষক দেলওয়ার।
এ ঘটনায় ২ নভেম্বর, ২৪ ইং ইমরানের বাবা মোঃ গোলাম মোস্তফা বাদি হয় ও সাথে ইয়ামিনের বাবা মোঃ ফাজেদুল ইসলাম সহ এজাহার করে অভিযুক্ত মোঃ দেলওয়ারকে আসামী করে ১৮৬০ সালের আইনানুযায়ী পেনাল কোর্ট ৩৬৪/৩২৮/৩০৭ ধারায় অপহরণপূর্বক বিষ পান করিয়ে হত্যা চেষ্টা একটি মামলা করেন। যার মামলা নং-০২। অভিযুক্ত দেলওয়ার উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের মদিনাতুল উলুম পঞ্চায়েতপাড়া কওমি মাদ্রাসা’র সাবেক শিক্ষক ও মোহতামিম হিসেবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি একই ইউনিয়নের দামোদরপুর বড় দোলাপাড়া গ্রামের মোঃ খলিলুর রহমানের ছেলে।
এ ঘটনায় প্রতক্ষ্যদর্শী মোছাঃ আক্তারা বেগম ও বিউটি জানান, ওই দিন তারা ছাগল বাঁধতে ও গরুকে পানি খাওয়াতে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে গিয়ে ছোট বাচ্চার গোঙ্গানির আওয়াজ শুনতে পেয়ে এগিয়ে যান। তাদের দেখে অভিযুক্ত দেলওয়ার শিশু ইয়ামিনকে পাশের হলুদ ক্ষেতে রেখে পালিয়ে যায়। অপর শিশু ইমরান কোন ভাবে দৌড়ে বাড়ীতে যায়।
চাঞ্চল্যকর এঘটনায় এলাকায় তোলপার শুরু হলে, পারিবারিক ও স্থানীয় ভাবে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থার অবনতি দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানন্তর করে। সেখানে ১২ দিন চিকিৎসার পর গত ১১ নভেম্বর তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। শিশুদ্বয় মোটামুটি সুস্থ্য হলেও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে পারিবারিক পর্যবেক্ষনে তাদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীদ্বয় একই ইউনিয়নের কাজীপাড়ার নয়াপাড়া গ্রামের খাজা মিয়ার ছেলে ইয়ামিন হোসেন(১১) আরবি শাখায় এবং পঞ্চায়েতপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ইমরান হোসেন(১০) স্থানীয় ভাবে উক্ত মাদ্রাসায় মক্তব শাখায় পড়ে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন অভিযুক্ত শিক্ষক দেলোয়ার মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইয়ামিনের মাধ্যমে অপর শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনকে ডেকে আনতে পাঠায়। মায়ের পাশে খেতে বসা ইমরান, ইয়ামিনের ডাকে সাড়া দিতে তরিঘড়ি করে ভাত খেয়ে বেড়িয়ে যায়। ঘন্টা খানেক এর ভিতরে সে বাসায় ফিরে এসে বাথরুমে গোসল করাকালিন সময়ে তার বাবা বাড়ীতে এলে বিষের গন্ধ বুঝতে পারে। এর মধ্যেই এলাকায় হৈচৈ পরে যায় ঘটনাস্থলে (কবরস্থানে) পরে থাকা ইয়ামিনকে নিয়ে। ইমরানের চাচার বাড়ীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ইয়ামিন লজিং থেকে পড়ালেখা করত। ঘটনার দিন ইয়ামিনের মাধ্যমে ইমরানকে ডেকে নিয়েছিল অভিযুক্ত শিক্ষক দেলওয়ার।
শিশুদের বর্ণনা মতে, গোপন কূপে প্রবেশের পর ইমরান নামের শিশুটি বাড়িতে ভাত খেয়ে আসায়, সে জুস খেতে না চাইলে শিক্ষক দেলোয়ার রাগান্বিত হয়ে ধমক দেয়। শিক্ষকের ধমকানিতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জুস পান করায় ইমরান বমি করেছিল বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য যে- সেসময় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনাস্থল দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষ ছুটে আসত। বেশ কয়েকদিন ঘটনাস্থলে উৎসুক লোকজনের ভিড় করতে দেখা যায়।
এস আই কনক রঞ্জন বর্মণ বলেন, আসামী খুবই ধুরন্ধর ব্যক্তি ছিল। প্রতি নিয়ত সে তার স্থান পরিবর্তন করত। সর্বোচ্চ প্রযুক্তিগত তদন্ত চালিয়ে অবশেষে তাকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
তারাগঞ্জ থানার ওসি সাঈদুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসা দুই শিক্ষার্থীকে বিষ পানে হত্যা চেষ্টার অভিযুক্ত আসামী দেলোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আগামীকাল তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।