অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত গলাচিপার ইউএইচএফপিও
- গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ PM , আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ PM
পটুয়াখালীর গলাচিপা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিন অনুমতি ছাড়াই গত ৩০ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা সেবাসহ অফিসের দাপ্তরিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে, যা রোগী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। এদিকে ইউএইচএফপিও ছুটিতে রয়েছেন বলে জানা গেলেও, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে কোনো ছুটির আবেদন বা অনুমোদনের তথ্য নেই। সিভিল সার্জন বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবগত বলে জানান। সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, "আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না, তথ্য নাই। আমার সাথে তার কোন যোগাযোগ হয় নাই।"
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগ ও জরুরি সেবা নিতে প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। এছাড়া সোমবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের ইনডোরে ৭০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২০ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু রোগী সহ নানান জটিল রোগ নিয়ে ভর্তি রোগী। দুদিন ধরে হাসপাতালে রোগীদের সেবা বিঘ্ন হলেও ইউএইচএফপিও এর অনুপস্থিতির কারণে দেখার কেউ নাই। জরুরি বিভাগে সেবা পেতেও রোগীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘসময়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ পদ ইউএইচএফপিও কিন্তু হটাৎ শনিবার ৩০ নভেম্বর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা ও দাপ্তরিক কাজে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। রোববার ০১ ডিসেম্বর ও সোমবার ০২ ডিসেম্বর সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে ইউএইচএফপিও-র খোঁজ পাওয়া যায়নি। জানা যায় তিনি অফিসে আসেন নাই। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. সাইফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে জানান, তিনি গত তিনদিন ধরে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। এ বিষয়ে কিছু জানেন না। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত ইউএইচএফপিও।
এ বিষয় প্রতিবেদকের কথা হয় হাসপাতালে কর্মরত একাধিক ডাক্তার ও স্টাফের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ৩০ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ডা. মেজবাহ উদ্দিন কে দেখেন নাই। কোথায় আছেন কিংবা ছুটিতে গেছেন কিনা সেটাও তারা বলতে পারেন না। ছুটির জন্য কোন লিখিত আবেদন দিয়েছেন কিনা জানাতে চাইলে তারা জানান, এ বিষয়ে জানেন না।" হাসপাতাল এভাবে চলতে পারে না বলেও তারা জানান। একটি সূত্র জানিয়েছে তিনি ঢাকায় অবস্থান করতে পারেন।
জরুরি বিভাগে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে পানপট্টি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নেছার মিয়ার স্বজন নাঈম বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসার পর ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করতেছি কোন ডাক্তার নাই। ডাকুয়া থেকে আসা হাসপাতালে ভর্তি সাড়ে আট মাসের বাচ্চা নাফিসের বাবা নাঈমুল ইসলাম বলেন, "গত ২৯ নভেম্বর বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। এই তিনদিনে মাত্র একদিন ডাক্তার ওয়ার্ড পরিদর্শনে এসে একবার দেখে গেছে। এখন বাচ্চার চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।" এছাড়াও কথা হয় একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনের সাথে। তারা বলেন ডা. মেজবাহ উদ্দিন কে দুইদিন ধরে হাসপাতালে দেখেন নাই। হাসপাতালের সেবা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে ইউএইচএফপিও-র অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের দ্বায়িত্বভার কার কাছে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। জানা যায়, ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিন গলাচিপা হাসপাতালে ২০১৭ সাল থেকে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ইউএইচএফপিও হিসেবে ২০২৩ সালে পদোন্নতি পান। সম্প্রতি খুলনার সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইউএইচএফপিও হিসেবে বদলি আদেশ পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএফপিও হিসেবে পদায়ন হয়েছেন ডা. মো. ইমাম হোসেন। গত বুধবার ২৭ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ বি এম আবু হানিফ স্বাক্ষরিত দুটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ডা. মেজবাহ বর্তমান কর্মস্থলের দ্বায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে এই আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হলো। প্রজ্ঞাপন জারীর ৫ (পাঁচ) কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ তাহাদের দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন অন্যথায় ০৬ (ছয়) দিনের দিন হতে সরাসরি অবমুক্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে হাসপাতালে তার অফিসে গেলে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি জানান, "এক সপ্তাহের ছুটিতে আছেন।" লিখিত বা মৌখিক কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানাতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, "ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে দেখা করে কথা বলবেন।"
ইউএইচএফপিও হিসেবে পদায়ন পাওয়া ডা. ইমাম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, "আমি এখনো হাসপাতালের চার্জ বুঝে পাইনি। ডা. মেজবাহ উদ্দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, "আমি শুনেছি বদলি হয়েছেন তিনি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত কিনা খোঁজ নিয়ে দেখছি।"
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান মুঠোফোনে বলেন, "আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না, তথ্য নাই। আমার সাথে কোন যোগাযোগ হয় নাই।" বদলি আদেশের বিষয়ে বলেন, আমি শুনেছি তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো চিঠি পাইনি। তাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে আদেশ পৌঁছাতে পারে"। অনুপস্থিত থাকলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, "এটা বলার এখনো সময় হয়নি"।
এদিকে সেবা গ্রহীতা ও স্থানীয়রা মনে করছেন জনগণের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত ইউএইচএফপিও-র অনুপস্থিতির বিষয়টি সমাধান করা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপই পারে সেবার মান বজায় রাখতে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিতি একটি গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য হয়। এটি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। মূলত, এই বিধিমালা অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বা ছুটিতে থাকা আইনবিরুদ্ধ বলে গণ্য হয় এবং এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।