ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা: রোগীদের ভোগান্তি

গলাচিপা
  © টিবিএম

গলাচিপা ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) পাঁচদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতির ফলে জরুরি চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে ইউএইচএফপিও ছুটিতে রয়েছেন বলে জানা গেলেও, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে কোনো ছুটির আবেদন বা অনুমোদনের তথ্য নেই। সিভিল সার্জন বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবগত বলে জানান।

গত ৩০ নভেম্বর থেকে ইউএইচএফপিও ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা জানান, কোন কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন তিনি। ছুটির বিষয়ে কিছু জানেন না তারা। এর ফলে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে ইউএইচএফপিও-র খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা ও দাপ্তরিক কাজে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত পাঁচদিন ধরে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ইচ্ছে মতো কর্মস্থলে আসেন আবার চলে যান। জবাবদিহিতার ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেই।

জরুরি বিভাগে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা নেছার উদ্দিনের (৫০) স্বজন নাঈম বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসার পর থেকে দীর্ঘক্ষন ধরে অপেক্ষা করতেছি কোন ডাক্তার নাই। হাসপাতালে ভর্তি সাড়ে আট মাসের বাচ্চা নাফিসের বাবা নাঈমুল ইসলাম (৩২) বলেন, "গত ২৯ নভেম্বর বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। এই কয়দিনে মাত্র দু'দিন ডাক্তার ওয়ার্ড পরিদর্শনে এসে একবার দেখে গেছে। এখন বাচ্চার চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।" এরকম সমস্যার কথা জানিয়ে অন্যান্য রোগীরাও জানান, “প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” সরেজমিনে হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় রোগীদের অবর্ণনীয় র্দুদশার চিত্র। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থাকলেও তারা পাচ্ছেন না সেবা। আতংকে কাটছে তাদের সময়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে হাসপাতালে তাকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি জানান, "এক সপ্তাহের ছুটিতে আছেন।" লিখিত বা মৌখিক কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানাতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, "ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে দেখা করে কথা বলবেন।" এই বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তাকে বদলির বিষয় জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, "আমি শুনেছি বদলি হয়েছেন তিনি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি। পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান মুঠোফোনে বলেন, "আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না, তথ্য নাই। আমার সাথে কোন যোগাযোগ হয় নাই।" অনুপস্থিত থাকলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, "এটা বলার এখনো সময় হয়নি"। অনুমতি ব্যতিত কর্মস্থল ত্যাগের বিষয়টি পরিচালককে অবহিত করেছি এবং পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।"

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগ দেয়ার জন্য পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার পদ থেকে অবমুক্ত হয়ে ডা. মো. ইমাম হোসেন পদায়নের জন্য অপেক্ষমান রয়েছেন। দায়িত্বভার বুঝিয়ে না দেয়ায় তিনি ওই পদে যোগদান ও দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ডা. মো. ইমাম হোসেন পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল থেকে অবমুক্ত হন এবং ২৯ নভেম্বর নতুন পদে যোগদানের জন্য গলাচিপা আসেন। কিন্তু ডা. মো. মেজবাহউদ্দিন ডা. মো. ইমাম হোসেনকে দায়িত্বভার হস্তান্তর না করে ওইদিন হটাৎ করে উধাও হয়ে যান। এতে নতুন পদে যোগ দিতে এসে বিপাকে পড়েন ডা. মো. ইমাম হোসেন।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ গত ২৭ নভেম্বর এক পত্রে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মেজবাহউদ্দিনকে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করেন। একইদিন আরেক পত্রে একই কর্মকর্তা পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের সহকারী সার্জন/সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. ইমাম হোসেনকে গলাচিপা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে বদলি করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ডা. মো. মেজবাহউদ্দিন ২০১৭ সালে প্রথমে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। ২০২৩ সালে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অবস্থায় বর্তমান পদে পদোন্নতি পান। এক নাগাড়ে প্রায় ৮ বছর একই এলাকায় কর্মরত থাকায় তিনি বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এই প্রভাব খাটিয়েই তিনি বদলি ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন। যে কারণে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরণের অনুমতি কিংবা ছুটি না নিয়ে তিনি তব্দিরে ব্যস্ত রয়েছেন। 

এসব বিষয়ে সদ্য পদায়ন পাওয়া ডা. মো. ইমাম হোসেন বলেন, "আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে পাইনি। তাই ইচ্ছে থাকলেও কিছু করতে পারছি না। এভাবে কাউকে কিছু না বলে ডা. মেজবাহউদ্দিনের উধাও হয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।"