১২ বছরেও বিধবা ভাতা পাননি কাননবালা:বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প বাঁচার একমাত্র অবলম্বন

কালাই
  © টিবিএম

জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে একটু স্বস্তি পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন কাননবালা। বয়সের ভার আর দুঃসহ জীবনে প্রতিদিনই তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে কোথায় তাঁর প্রাপ্য অধিকার!জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের ছোট বলিগ্রামে সরকারি সহায়তায় নির্মিত আদর্শ গ্রামে ছেলে ও নাতিদের নিয়ে বসবাস করছেন এই বিধবা নারী। কিন্তু আজও তিনি বিধবা কিবা বয়স্ক ভাতার কোনো সুবিধা পাননি।

ভোটার আইডি অনুযায়ী কাননবালার বয়স ৬২ বছর, যদিও প্রকৃত বয়স আরও ৬-৭ বছর বেশি। একসময় গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর উপজেলার কোমরপুর গ্রামে বসবাস করতেন তিনি। ২০১৩ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন পুরোপুরি বদলে যায়। আশ্রয় নেন ছোট বলিগ্রামের আদর্শ গ্রামে।এখানে তিনি বাঁশ দিয়ে হস্তশিল্প তৈরির কাজ করে কোনোমতে দিন পার করছেন। বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার আশায় ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বহুবার গেছেন কাননবালা। কিন্তু প্রতিবারই তাঁকে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয়েছে।

কান্নাভেজা কণ্ঠে কাননবালা বলেন,“অনেক জায়গায় গেছি,অনেকের কাছে বলেছি।কিন্তু কিছুই পাইনি। এই বয়সে এসেও কষ্টের জীবন কাটাতে হচ্ছে।বুঝি,মরেও শান্তি পাব না। ”তিনি জানান,তাঁর জীবিকার একমাত্র ভরসা বাঁশ দিয়ে তৈরী হস্তশিল্প। এটার মাধ্যমে তাঁর নিজের জীবন সংগ্রামের ভরসা খুঁজে নিয়েছেন। ছোট ঝুড়ি,টুকরি , পাখা,চালনিসহ এমন বহু জিনিস তৈরি করেন তিনি।প্রতিটি জিনিসে থাকে তাঁর নিখুঁত হাতের ছোঁয়া।কিন্তু সঠিক বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্যের অভাবে তাঁর আয় খুবই সামান্য। “বাঁশের জিনিস বানাতে অনেক কষ্ট হয়।দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়,কিন্তু যা পাই,তাতে সংসার চলে না,"বললেন কাননবালা।

আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা বলেন,“ অসহায় কাননবালার দীর্ঘ ১৫ বছরের বঞ্চনা আমাদেরও ব্যাথিত করেছে। বাঁশ দিয়ে হস্তশিল্প তৈরির মাধ্যমে জীবনের কঠিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই নারীর জন্য প্রয়োজন সরকারি সহায়তার দ্রুতবাস্তবায়ন।এ বয়সে এসেও যদি তাঁর মত অসহায় নারীকে সরকারি সহায়তা না দেওয়া হয়,তাহলে এটি আমাদের সমাজের চরম ব্যর্থতার উদাহরণ হবে।”

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোলাম রসূল বলেন,“আদর্শ গ্রাম প্রকল্পে অনেক অসহায় মানুষ রয়েছেন,যারা এখনও সরকারি সুবিধা পাননি।কাননবালার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।আমরা দ্রুত তাঁর জন্য বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।”

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,“কাননবালার নাম ভাতার তালিকায় নেই জেনে দুঃখিত। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাঁর নামের প্রস্তাব এলে দ্রুত কাগজপত্র যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন,“ কাননবালার মত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।বিষয়টি ইতোমধ্যে আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। উপযুক্ত কাগজপত্রসহ আবেদন করলে তাঁর ভাতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।