দু'বছর আগে একনেকে পাস,

রামনাবাদ সেতুর কাজ শুরু হয়নি এখনো 

গলাচিপা
  © টিবিএম

স্বপ্নের সেতু যেন স্বপ্নই রয়ে গেছে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল দীর্ঘদিনের। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) সভায় প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে দুইবছর আগে, কিন্তু কাজ শুরু হয়নি এখনো। কাগজে-কলমে আটকে থাকা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ। অথচ প্রকল্প মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল।

দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রামনাবাদ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। নদী পারাপারে ব্রিজ না থাকায় নৌকা ও ফেরি ভরসা। দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে দীর্ঘসূত্রিতা। এখনো কবে ব্রিজ নির্মাণ হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসন। নদীর দুই পাড়ে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। প্রতিদিন নদী পার হয়ে জেলা, বিভাগ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার জন্য মানুষকে প্রতিদিন পার হতে হয় এই নদী। একমাত্র ভরসা নৌকা ও ভাঙাচোরা ফেরি। এতে শুধু সময়ই নষ্ট হয় না, বরং ঝুঁকিও থাকে অনেক। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে বয়স্ক নারী, রোগী ও তাদের স্বজনরা। বর্ষার সময় এই দুর্ভোগ পৌঁছে চরমে।

রামনাবাদ নদীতে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০২২ সালে অনুমোদন করেছে। প্রকল্প ব্যয় প্রথমে ২০৪.৩৬ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হলেও, পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ৫২১.২৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেতুটি দৈর্ঘ্য: ৮৮২.৮১ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু, যা দুই লেন বিশিষ্ট এবং ১০.২৫ মিটার প্রশস্ত হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)। তবে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, আট মাস পরও কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ, নদী শাসন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেতুটি নির্মিত হলে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সদর, বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও আমতলী উপজেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। বর্তমানে রামনাবাদ নদীতে ফেরি সার্ভিস পরিচালিত হওয়ায় যাতায়াতে সময় ও খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ হলে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি কমবে। 

গাড়িচালক মো. রনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরে শুনে আসছি গলাচিপা সেতুটি হবে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যক্রম চোখে পরছে না। আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, একনেকে পাস হওয়ার কথা শুনেছিলাম। ভেবেছিলাম, এবার আমাদের কষ্ট কমবে। কিন্তু এতদিন পরও কোনো কাজ শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে তাও জানতে পারছি না।

এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে যেতে নৌকায় অনেক সময় লাগে। বৃষ্টি হলে তো পুরো দিনই মিস হয়ে যায়। ব্রিজ হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।

সাবেক এক সেনা সদস্য বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি ব্রিজ হবে, কিন্তু হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় সরকার পরিবর্তন হলেও কার্যকর কিছুই হচ্ছে না। জীবিত অবস্থায় ব্রিজটি দেখে যেতে পারবো কি না জানি না।

পঞ্চাশ ঊর্ধ্বো এক ব্যক্তি জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে ব্রিজ হওয়ার কথা শুনছি। প্রতিবার শুধু বলছে কাজ হবে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। আমরা চাই, দ্রুত কাজ শুরু করে আমাদের জীবন সহজ করুক। ব্রিজটি হলে রাঙ্গাবালী, দশমিনা, বাউফল এবং কালাইয়ার জন্য খুব ভালো হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা গণ অধিকার পরিষদের গলাচিপা উপজেলা শাখার আহবায়কের আশা শিগগিরই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। 

জামায়াতে ইসলামির জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইহাইয়া খান বলেন, যে এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা যতো ভালো, সে এলাকা ততো উন্নত হয়। ব্রিজটি নির্মাণ হয়ে গেলে গলাচিপা আর অবহেলিত থাকবে না। সেতুটি নির্মাণ হলে বদলে যাবে রামনাবাদ নদীর দুই তীরের মানুষের জীবন। দ্রুত কাজ শুরুর মাধ্যমে মানুষের আশা পূরণ করবে সরকার—এটাই সবার প্রত্যাশা।"

গলাচিপা বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্রিজটি লাখ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি। কাজেই সেতুটি জরুরিভিত্তিতে নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান জানান, রামনাবাদ চ্যানেলে সেতুটি বর্তমানে প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত। তবে এর নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে যাচ্ছে না। ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি উল্লেখ করে নদী পাড়াপাড়ে মানুষের নানা ভোগান্তির কথা জানান তিনি। এছাড়া তিনিও প্রত্যাশা করেন দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) পটুয়াখালী সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু হবে।"

উল্লেখ্য স্বপ্নের সেতুটি বাস্তবায়িত হলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে না, বরং দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবাহেও আসবে গতি। কিন্তু ফাইলবন্দি এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে আরও কত দেরি, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।