মংডুর টাকাওয়ালা রোহিঙ্গারা টেকনাফের ভাড়া বাসায়! 

কক্সবাজার
  © সংগৃহীত

টেকনাফের এমন কোন ভাড়া বাসা নাই যেখানে রোহিঙ্গা থাকেনা। প্রায় সব ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গা পরিবার উঠে সেখানে বসবাস করছেন, তাও আবার ওপেন সিক্রেট। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে শুরু করে উপজেলার শেষ ইউনিয়ন হোয়াইক্যংয়ের প্রতিটি ভাড়া বাসা রোহিঙ্গা ভর্তি। বাসার মালিকরাও বেশি ভাড়া পেয়ে রোহিঙ্গাদের ভাড়া দিচ্ছেন না নির্ভয়ে। কারণ এখন আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এসব রোহিঙ্গাদের অবৈধ বসবাস নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই।

টেকনাফের স্থানীয়রা বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সামরিক জান্তার তুমুল লড়াইয়ের পর রাখাইন রাজ্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে গেছে। ফলে সেখানে থাকতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। এমনকি মংডু শহর আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ার পর সেখানকার সাবলম্বী অনেক রোহিঙ্গারও অনিরাপদ শহর মঙডু। তাই সবাই সব কিছু ছেড়ে এখন টেকনাফে। যারা ক্যাম্পে না থেকে টাকার জোরে থাকছেন স্থানীয় বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাসায় তাদের মধ্যে অনেকেই টেকনাফ পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে।

গত কিছুদিন ধরে টেকনাফ পৌর এলাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বাড়ির সংখ্যা শতাধিক, যার বেশিরভাগেই এখন রোহিঙ্গা ভাড়াটিয়া। এসব রোহিঙ্গা মূলত গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, প্রতিটি এলাকা এখন রোহিঙ্গায় ভরে গেছে। তবে, ঠিক কতজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয়নি।

টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফিরোজ কামাল নামে একজন বলেন, “রাখাইনে পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই, প্রতিদিন হামলা হচ্ছে, শিশু এবং নারীরা মারা যাচ্ছে। তাই মৃত্যুর ভয়ে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেেছেন।

এছাড়া, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছে, যেমন শিলবনিয়া পাড়া, নাইট্যংপাড়া, গোদারবিল, সাবরাংসহ অন্যান্য এলাকার ভাড়া বাসাগুলিতে। একদিকে যেমন রোহিঙ্গাদের জন্য বাসা ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে বাসা ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। টেকনাফের হ্নীলার প্রতিটি ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গা। এখানে নামকরা বড় লোকদের আত্মীয় স্বজন মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করেছেন। যারা এখানে থাকা আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় ভাড়া বাসায় উঠেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হ্নীলা এক বাসিন্দা জানান, পূর্ব সিকদার পাড়া, ফুলের ডেইল, পানখালীসহ সব ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গাতে ভরা। তারা সবাই মিয়ানমারে টাকাওয়ালা। স্থানীয়রা আরো জানান, সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের যাতায়াত বেড়েছে এবং দালালদের মাধ্যমে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিজিবি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে টহল জোরদার করেছে, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের জন্য ক্যাম্পে জায়গা না থাকায়, ভাড়া বাসায় থাকার এই প্রবণতা বাড়ছে। তবে, স্থানীয়রা এসব রোহিঙ্গাদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন

টেকনাফ থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়ার পরও তিনি ধরেননি। তবে প্রশাসনেন একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভাড়া বাসাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।