বিভাগের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে নোয়াখালীবাসীর খোলা চিঠি

নোয়াখালী
  © টিবিএম

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিনের প্রাণের জেলা নোয়াখালীকে প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষনা ও বাস্তবায়নের দাবিতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড.মোহাম্মদ ইউনুসকে খোলা চিঠি দিয়েছে নিরাপদ নোয়াখালী চাই সংগঠন ও নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক সাইফুর রহমান রাসেল। আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ডাক যোগে এই চিঠি পোস্ট করেন তিনি। পাঠকদের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো ওই খোলা চিঠিটা হুবহু তুলে ধরা হলো :

“মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়,
“শুরুতে আমার শশ্রদ্ধ সালাম ও আমার প্রাণের জেলা বৃহত্তর নোয়াখালীর ১ কোটি মানুষের নিরন্তর শুভেচ্ছা ও পুষ্পিত অভিনন্দন গ্রহন করুন। হে নোবেল জয়ী শান্তির প্রতীক. আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী মহান বীর সেনানী, বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিনের প্রাণের জেলা আমাদের এই নোয়াখালী। এই জেলায় জম্ম হয়েছে অনেক জ্ঞানীগুণী জনের, যারা নিজ ব্যক্তিত্বে, জ্ঞানে, গুনে, মেধায়, মননে, কর্মে, কথনে ইতিহাসে কীর্তিমান”। 

ধনে, মনে, জনে, ইতিহাস, ঐতিহ্যে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিপূর্ণ একটি জেলা আমাদের নোয়াখালী। যার রয়েছে নিজস্ব ভাষাগত বৈশিষ্ট্য, রয়েছে স্বকীয়তায়পূর্ণ নিজস্ব কৃষ্টি ও কালচার, যার সীমানা বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল ছাড়িয়ে কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার তিন ভাগের দুই ভাগ এলাকার লোকজন নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। 

অপরদিকে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নোয়াখালীর সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিগন ও তরুণ ব্যবসায়ীবৃন্দ, যাদের অবদানে, আমাদের রক্তের দামে কেনা প্রিয় জম্মভুমির শতকরা ৩৫ ভাগ অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। ৭ লক্ষাধিক প্রবাসী অধ্যুষ্যিত নোয়াখালীর রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের রেমিট্যান্সে সমগ্র দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিপুল সম্ভাবনার দিকে। 

শুধু তাই নয়, বীর সন্তান রুহুল আমিন ও ভাষা শহীদ সালামের নোয়াখালীতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে আরেকটি নতুন বাংলাদেশ, যা “স্বর্ণদ্বীপ” কিংবা পূর্বের ভাসানচর” নামেও পরিচিত, যার আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের চাইতেও বেশি । আমাদের আছে দেশী, বিদেশী পর্যটকদের মনজুড়ানো নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য মন্ডিত , প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের আঁধার “নিঝুম দ্বীপ” যা দেশের পর্যটন খাতে বিশেষ অবদার রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় ২০০৮ সাল থেকে ঢাকা থেকে মাত্র ৮০কি:মি দূরত্বের ত্রিপুরার ভগ্নাংশ কুমিল্লাকে নয়, ১৬০কিমি: দূরত্বের স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলা নোয়াখালীকেই "নোয়াখালীর" স্বনামে প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে ঘোষনা ও বাস্তবায়নের দাবি তোলে বৃহত্তর নোয়াখালীর ১ কোটি মানুষ।

বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লার ছয়টি জেলার মধ্যবর্তী স্থানে নোয়াখালীর অবস্থান। ভৌগলিক ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নোয়াখালীর সাথে অন্য পাঁচ জেলার মানুষের সড়ক, রেল ও নৌ পথে যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো । 

এদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১৭৭২ সালে সৃষ্ট, অত্যন্ত সুপরিচিত ও ২০০বছরের প্রাচীন জেলা নোয়াখালী, যার আয়তন ৪২০২.৭০ কি:মি: । অপরদিকে, ১৯৬০সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা যার আয়তন ৩০৮৭.৩৩কি:মি:। সুতরাং জনসংখ্যা ও আয়তন উভয় দিক বিচার, বিশ্লেষন করে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লাকে নিয়ে নোয়াখালী নামে নোয়াখালী বিভাগ গঠন অত্যন্ত যৌক্তিক ও জরুরী।

আবার যেহেতু রাজধানী ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব মাত্র আশি কিলোমিটার এবং ফোর লেন সড়কে কুমিল্লা হতে ঢাকা যাতায়াতে সময় লাগে মাত্র এক ঘন্টা, সেহেতু রাজধানী ঢাকার এত কাছের জেলা কুমিল্লাকে বিভাগ করার কোনো যুক্তি নেই বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ ।

আর কুমিল্লা জেলা সদরটি মূলত ভৌগলিক ভাবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একেবারেই কাছাকাছি অবস্থিত এবং কুমিল্লা জেলা সদর হতে পূর্ব দিকে মাত্র ছয় (৬) কিলোমিটার দূরে কটকবাজারের পাশে ভারত সীমান্ত তথা সোনামুড়ী বাজার অবস্থিত, তাই ভৌগলিক কারনে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যই একেবারে সীমান্ত লাগোয়া কুমিল্লাকে বিভাগ করা যায়না বলে সুধীজন মনে করেন।

সর্বোপরি, জনসেবার জন্য প্রশাসন এবং তৃণমূলের জনগণের দোরগোড়ায় বিভাগীয় প্রশাসনিক সেবা পোঁছাতে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুপ্রাচীন জেলা নোয়াখালীকে উল্লেখিত ছয় জেলা নিয়ে অনতিবিলম্বে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষনা ও বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা নোয়াখালীর সর্বস্তরের জনগণ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় আপনার নিকট সবিনয়ে অনুরোধসহ আকুল আবেদন জানাচ্ছি। 

পরিশেষে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় আপনার সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। মহান আল্লাহ আপনার সহায় হউন। আল্লাহ হাফেজ ।