ধানের চড়া দামে কৃষকের লাভ, ফাঁকা সরকারি গুদাম

ধান
  © টিবিএম ফটো

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা, যা দেশের অন্যতম শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত, সেখানে সরকারের ধান সংগ্রহ অভিযান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কৃষকদের কাছে বাজারের উচ্চমূল্য এতটাই লাভজনক যে, তারা সরকারের খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বিগত দুই মাসে এই উপজেলার খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্য। এতে সরকারের সংগ্রহ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। কৃষক ও মিল মালিকদের মতে, ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য বাড়ানো ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অন্যদিকে, কৃষি ও খাদ্য বিভাগকে আরও বাস্তব সম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্প্রতি কালাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ধানের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পাঁচশিরা বাজার, পুনট বাজার এবং জিন্দারপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ধানের দাম প্রতি মণে ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে।বর্তমানে মোটা জাতের আমন ধান ১৩৭০-১৪০০ টাকায়, চিকন স্বর্ণ ফাইভ জাতের ধান ১৪৫০-১৫০০ টাকায় এবং কাটারি ধান ১৯৫০ -২০০০ টাকায়,আতব চাল (মোটা) ১৮০০ টাকায়, আতব (চিকন) ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

সরকারি সংগ্রহ অভিযানে ধানের নির্ধারিত মূল্য মাত্র ৩৩ টাকা কেজি (১৩২০ টাকা প্রতি মণ)। কিন্তু বাজারে এই ধান বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০-৪১ টাকা কেজি দরে। ফলে কৃষকরা সহজেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। পাইকাররা রাস্তাতেই দরদাম না করেই ধান কিনে নিচ্ছেন, যা কৃষকদের জন্য আরও সুবিধাজনক।

কালাই উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এতে মোট ধান উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৬ টন। তবে ধানের অভাব না থাকা সত্ত্বেও বাজারের উচ্চমূল্যের কারণে সরকারি সংগ্রহ অভিযান কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। চলতি আমন মৌসুমে ৮২৯ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত দুই মাসে এই সংগ্রহ এখন শূন্য।

উপজেলার কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, গুদামে ধান দিতে গেলে নানা ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। আর্দ্রতা যাচাই,অনলাইনে নিবন্ধন, পরিবহন খরচ, ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলন এসব ঝামেলা কেন করব! যখন বাজারেই ভালো দাম পাচ্ছি! গুদামে ৩৩ টাকা কেজি দাম পাব,কিন্তু বাজারে বিক্রি করছি ৪০-৪১ টাকায়। তাছাড়া গুদামে ভেজা ধান নিলেও দোষ ধরা হয়, কিন্তু বাজারে তা কোনো সমস্যা না।”

চাতাল ব্যবসায়ী মো.মেহেদুল ইসলাম জানান, সরকারি চাপে আমাদের চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। না দিলে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি আসে। কিন্তু প্রতিকেজি চাল সরবরাহে আমাদের ৪-৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

চালকল মালিকরাও ধানের চড়া দামের কারণে বিপাকে পড়েছেন। উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, খোলা বাজারে মোটা ধান এখন ১৩৭০-১৪০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে, অথচ সরকারি ক্রয়মূল্য অনেক কম। প্রতিকেজি চাল তৈরি করতে আমাদের খরচ হচ্ছে ৪৭ টাকা, কিন্তু সরকার কিনছে ৪২ টাকায়। এভাবে চললে মিল চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।”

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান জানান, কৃষকরা গুদামে ধান দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এর পেছনে বাজারে উচ্চমূল্য এবং গুদামের শর্তপূরণের কঠিনতার কারণ রয়েছে। ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের নিচে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশিরভাগ কৃষক ১৭-১৮ শতাংশ আর্দ্রতার ধান নিয়ে আসছেন। এছাড়া, ধান পরিষ্কার করার শর্তও অনেক কৃষকের জন্য ঝামেলা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দাম যদি বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হতো, তাহলে সংগ্রহ অভিযান সফল হতো।”