জরাজীর্ণ মন্দিরে ২০০ বছরের পুরাতন দয়াময়ী মাঘী সপ্তমী মেলা

গলাচিপা
  © টিবিএম ফটো

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দী ইউনিয়নের সুতাবাড়িয়া গ্রামে নদীগর্ভে বিলীন ধ্বংসপ্রাপ্ত দয়াময়ী দেবী মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মাঘী সপ্তমী মেলা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে কালী ও শিব পুজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মেলার কার্যক্রম। দুই শতাধিক বছরের পুরনো এ মেলায় হাজারো মানুষের ঢল নামে।

সকাল থেকেই ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও বিভিন্ন বাদ্য-বাজনার সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বহু শিশুর বাৎসরিক মাথা মুন্ডন করা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য ঐতিহ্যবাহী খিচুড়ি বিতরণ করা হয়, যা মেলার অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া, কালী মন্দিরে ধর্মীয় রীতিতে পাঠা বলিদান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভক্তরা মনোবাসনা পূরণের আশায় দেবীর চরণে অর্ঘ্য নিবেদন করেন।

মন্দির প্রাঙ্গণে বসেছে রঙ-বেরঙের আকর্ষণীয় খেলনার দোকান, পল্লীবাসীদের হাতে তৈরি বুননশিল্প, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী, মাটির বাসন-কোসন, মিষ্টির দোকান ও বিভিন্ন খাবারের স্টল। দিনভর ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মেলা প্রাঙ্গণে উৎসব লেগে থাকে। 

মেলা কমিটির সভাপতি গোনেশ চন্দ্র হাওলাদার ও পুরোহিত বিধান গাঙ্গুলী জানান, অর্থ সংকটের কারণে মেলার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা নদীভাঙন রোধে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্থান সংকুলান না থাকায় দর্শনার্থীদের দাঁড়িয়ে মেলা উপভোগ করতে হচ্ছে, যা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসাদুর রহমান জানান, প্রায় দুই শতাব্দী পুরনো এ মেলায় প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় ২০০ বছর আগে একটি প্রাচীন বেল গাছের নিচে রাতের আঁধারে মাটি ফুঁড়ে দয়াময়ী দেবীর মূর্তি আবির্ভূত হয়। সেই রাতেই জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন স্বপ্নে আদিষ্ট হন, যেখানে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় মূর্তির আবাসস্থলে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার। এরপর, ১২০৮ বঙ্গাব্দে সুতাবাড়িয়া গ্রামে জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

কালের পরিক্রমায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে মন্দিরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বর্তমানে মন্দিরের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে ভক্তরা উৎকণ্ঠিত। সংস্কারের অভাবে এটি আজ বিলুপ্তির পথে।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে দয়াময়ী মাঘী সপ্তমী মেলা এখনও স্থানীয়দের জন্য এক বিশাল আনন্দের উৎস। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশি-বিদেশি ভক্তরা এখানে আসেন, যা মেলাকে একটি সর্বজনীন মিলনমেলায় পরিণত করেছে।